বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রানা পাস করেছে

ফরিদপুরের নগরকান্দায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মো. রানা শেখ (১৫) পাস করেছে। রানা জিপিএ ৩.৮৯ পেয়েছে। সোমবার (২৮ নভেম্বর) এসএসসির ফল প্রকাশিত হয়।

রানা শেখ নগরকান্দা উপজেলার জঙ্গুরদী গ্রামের প্রয়াত মজিবর শেখের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রানা ছোট। সে নগরকান্দা সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমি থেকে চলতি বছর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়েছিল।

প্রচণ্ড শোক বুকে ধারণ করে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে খুশি রানা বলে, ‘আমি বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যেতে চাইনি। বাড়ির লোকজন এবং স্কুলের স্যাররা আমাকে জোর করেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। তারা আমাকে পরীক্ষা দিতে না পাঠালে আমার জীবন থেকে একটি বছর ঝরে যেতো। আমি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। বাবার স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে, আমি সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’ 

রানার ভাই হৃদয় শেখ বলেন, ‘আমার বাবা মজিবর শেখ ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মৃত্যুর ১৫ দিন আগে তিনি বাড়িতে আসেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাবা মারা যান। তখন বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই নগরকান্দার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আক্রামুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এসএসসির কৃষিশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় রানা। পরীক্ষা দিয়ে এসে বাবার জানাজায় অংশ নেয় সে।’

হৃদয় আরও বলেন, ‘অভাবের কারণে আমি বেশি লেখাপড়া করতে পারিনি। আমার ভাই রানা নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। বাবার মৃত্যুতে ভবিষ্যতে কীভাবে দিন যাবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিল আমার পরিবার। তবে বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিয়ে রানা যে পাস করাই আমরা খুশি। বাবা বেঁচে থাকলে তিনিও খুশি হতেন। রানার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের।’

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমাম রাজি টুলু বলেন, ‘শোকের মধ্যেও পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রানা পাস করেছে। তার জন্য শুভকামনা রইলো। পাশাপাশি রানার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।’