একসঙ্গে এসএসসি দিয়ে ভালো ফল করলেন বাবা-ছেলে

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকতকিনগর গ্রামে একই গ্রেডে বাবা-ছেলের এসএসসি পাসের ঘটনা ঘটেছে। ফলাফলে বাবা ইমামুল ইসলাম পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭৯। ছেলে আবু রায়হান পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৮২।

এই বাবা-ছেলে এ বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বাবা ইমামুল ভোকেশনাল শাখার ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেড এবং ছেলে রায়হান একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেডের ছাত্র হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নেন।

ইমামুল ইসলাম জানান, তার বাবা-মা বেঁচে আছেন। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবা-মার ১০ কাঠা ফসলি জমি আর দেড় কাঠা জমির ওপর বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। অষ্টম শ্রেণি পাসের পর ইমামুলকে সংসারের হাল ধরতে হয়। তাই ২৪ বছর আগে তিনি ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন। ওই চাকরি করা অবস্থায় একসময় ফরিদপুরের মেয়ে রেহেনাকে বিয়ে করেন তিনি। ১৮ বছর চাকরি শেষে স্বপরিবারে বাড়ি ফেরেন তিনি। এরপর থেকে তিনি বাড়ির সাথে একটি মুদি দোকানে ব্যবসার পাশাপাশি দুটি গরু আর কিছু হাঁস-মুরগি-কবুতর পালন করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার একটি সুপ্ত ইচ্ছা তার রয়ে গিয়েছিল। জীবনের এ পর্যায়ে এসে নিজেকে বড় ছেলের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর এবার এসএসসি পাস করলেন।

তিনি ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানান, সন্তানদের সঙ্গে তিনিও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান। ভবিষ্যতে ছেলেরা ভালো চাকরি পেয়ে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারলেই তিনি খুশি। নিজে শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি দুই ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে উৎসাহ দানসহ তাদের শিক্ষা অর্জনে সহায়তাই তার মূল লক্ষ্য।

ছেলে আবু রায়হান বলেন, ‘বাবার সঙ্গে পড়ালেখা করতে সুবিধা হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা পাস করায় ভীষণ আনন্দিত। ভবিষ্যতে বাবা-মার প্রত্যাশা চাই।’

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছা. শামসুন্নাহার জানান, পরীক্ষায় অনেকেই পাস করেছে। তবে এই বাবা-ছেলের একই সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া আর ভালো ফলাফল আলাদা মাত্রা যোগ করেছে এই প্রতিষ্ঠানে। তিনি এই বাবা-ছেলের মঙ্গল কামনা করেন।