বড় ভাইয়ের কোলে চড়ে কেন্দ্রে যাওয়া আশরাফ পাস করেছে 

দুই পা অচল। ডান হাতের কবজি নেই। এরপরও দমে যাননি আশরাফ উদ্দিন। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে সে। বড় ভাই সালাউদ্দিনের কোলে চড়ে কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে আশরাফ।

আশরাফ বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডী খলিফার বাড়ির বাবা নাসির উদ্দিন ও মা জাহানারা বেগমের ছোট ছেলে।

আশরাফের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার চার ছেলের মধ্যে আশরাফ সবার ছোট। ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর আশরাফ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে। তার বড় ভাইয়েরা ভীষণভাবে চায় আশরাফ আরও লেখাপড়া করুক। বড় ভাই সালাউদ্দিন কোলে করে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। এসএসসিতে পাস করেছে শুনে আমি অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছি। সে এবার কলেজে ভর্তি হবে।’

আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পরিবার ও স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় আমি এসএসসিতে পাস করেছি। আমি আরও লেখাপড়া করতে চাই। আমি উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি হবো। একই সঙ্গে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নেবো। ঘরে কম্পিউটার না থাকায় এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি।’

আশরাফের বিষয়ে পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি শফিউল আলম বলেন, ‘ছেলেটির অদম্য ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। দুই পা ও ডান হাত অচল হওয়ার পরও আশরাফ লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। আমার মনে হয়, সে একটু সহযোগিতা পেলে সাফল্য অর্জন করবে, পরিবার কিংবা সমাজের বোঝা হবে না। সে মেধাবী ছাত্র। দ্রুত লিখতে না পারার কারণে নম্বর কম পেয়েছে।’

পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শারীরিক অক্ষমতার পরও আশরাফ দমে যায়নি। এবার জিপিএ ২ দশমিক ৭৮ পেয়ে পাস করেছে। তার প্রতি শিক্ষকদের সহযোগিতা ছিল। শারীরিক সমস্যার কারণে আশরাফ নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করতো না, তবে সব পরীক্ষায় অংশ নিতো। এসএসসিতে তার এ সফলতা তার সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘আশরাফ উদ্দিন নিজের ইচ্ছাশক্তিতেই এসএসসি পাস করেছে। তার এ সফলতায় আমরা সাধুবাদ জানাই। তার উচ্চশিক্ষায় ভর্তি, বইপত্র কেনায় যদি আর্থিক কোনও সহায়তা লাগে, আমরা করবো। আমরা চাই আশরাফ আরও লেখাপড়া করুক।’