দীর্ঘদিন পর পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড়

টানা ছুটিতে পাহাড়প্রিয়দের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে পর্যটননগরী বান্দরবান। জেলার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, তমাতুঙ্গীসহ সবগুলো দর্শনীয় স্থানে এখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘদিন পর্যটক না আসেনি এসব স্থানে। এতদিন পর আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটায় খুশি এখানকার হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের মালিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন বহু পর্যটক। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে এ বছর শীত মৌসুমে তেমন একটা পর্যটকের আগমন না ঘটলেও সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষে টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় ব্যাপক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে বান্দরবানে।

৩৩সরেজমিন দেখা গেছে, যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা ভুলে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পর্যটকরা চাঁদের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। জেলার মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত ও তমাতুঙ্গীসহ সবগুলো দর্শনীয় স্থান এখন ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। কেউ-বা ছুটে যাচ্ছেন ঝরনার সৌন্দর্য দেখতে, কেউ-বা ছুটে যাচ্ছে সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে।

অবকাশ যাপনে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক আবদুর রহমান জানান, সরকারি ছুটি পেয়ে তিনি অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে বান্দরবান এসেছেন। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ তার খুব ভালো লাগছে।

আরেক পর্যটক সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘আমি অনেক দেশ বেড়িয়েছি। কিন্তু আমাদের দেশেও যে এত সুন্দর মনোরম দৃশ্য রয়েছে তা এখানে না আসলে জানতেও পারতাম না। আসলেই মন কেড়ে নেয় এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ।’

চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। নিজেকে সবুজ প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিতে চান ঢাকা থেকে আসা নারী পর্যটক নাদিরা জামান। তিনি বলেন, ‘বান্দরবান এত সুন্দর ভাবতেই পারছি না। এ যেন এক রঙিন স্বপ্ন।’

১১নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আদীব বড়ুয়া জানান, দীর্ঘদিন পর বান্দরবানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। শুক্রবারই প্রায় আড়াই হাজারের বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে নীলাচল পর্যটন স্পটে। শনিবার বিকালে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, দীর্ঘদিন পর টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক আশায় খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক জাফর বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর তিন দিনের টানা ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটছে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতেও এভাবে পর্যটকরা আসবেন।’

পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পর্যটকদের  নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, জেলায় পর্যটকদের সেবায় রয়েছে শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। এ ছাড়াও পর্যটক পরিবহনে রয়েছে চার শতাধিক চাঁদের গাড়ি। সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জেলার ২০ হাজার মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।