প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে জনসমুদ্র

রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে দল বেঁধে আসছেন মানুষ। জনসভাস্থল রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ (বর্তমান হাজী মুহম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) সকাল পৌনে ১১টার দিকে মানুষে মানুষে পূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এই জনসভা উপলক্ষে তোরণ, পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে সারা শহর যেন মোড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রবিবার সকাল থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিল-স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে জনসভাস্থল এবং আশপাশের এলাকা। নগরের সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।

এ উপলক্ষে রবিবার সকাল ৯টার দিকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ)। দুপুর ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা আছে। তবে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা আগেই বেলা ১১টার মধ্যেই পুরো জনসভা মাঠ জনসাধারণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঢলে পরিপূর্ণ হয়েছে সভাস্থল।

ভোর থেকেই জনসভা এলাকায় আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি উপজেলা থেকেও মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন তারা। তাদের স্লোগানে মুখর রাজশাহী নগরী।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে রাজশাহী বিভাগের সব জেলা থেকে আসছেন কর্মী ও সমর্থকরা। ট্রেনে বা বাসে করে রাজশাহীর জনসভায় আসেছেন তারা। জনসভার জন্য রাজশাহীতে সাতটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেন আজ সারাদিন রাজশাহী-নাটোর, রাজশাহী-জয়পুরহাট, রাজশাহী-সান্তাহার, রাজশাহী-ঢালারচর ও রাজশাহী-সিরাজগঞ্জ রুটে চলবে।

সভাস্থলে জনতার ঢল রবিবার সকালে রাজশাহী রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসছেন। ফলে সেসব এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি মাদ্রাসা মাঠে চলে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে ট্রেনে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, তাকে দেখতে না গেলে হয়? তাই চাচা-ভাতিজা সকালের ট্রেনে উঠে পড়েছি। রাজশাহীতে নেমে দেখছি বিশাল আয়োজন। চারিদিকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর পোস্টার। অনেক ভালো লাগলো রাজশাহীতে এসে।’

ট্রেনে করে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সকালে প্রথমে বাসে উঠেছিলাম। বাস থেকে নেমে ট্রেনে চড়ি। সব জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রী ও তার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা। নির্বাচনের বছরে হওয়ায় রাজশাহীর জনসভা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী যশোর, চট্টগ্রামের জনসভায় ভোট চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে এক পলক কাছে থেকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে।’

প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় জয়পুরহাট থেকে আসা রাজিব হোসেন বলেন, ‘বাসে করে রাজশাহীতে আসলাম, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা দেখতে। টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকায় দেখেছি প্রধানমন্ত্রীর আসছেন, তাই অনেক সুন্দর করে রাজশাহী সাজানো হয়েছে। এসে অনেক ভালো লাগছে।’

রাজশাহী নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের খোঁজাপুর এলাকা থেকে আসছিলেন সুফিয়া বেগম। তার দলে কমপক্ষে শ’খানেক নারী। তাদের অনেকে শিশুদের কোলে নিয়ে আসছেন। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা থেকে বাসে করে এসেছেন আওয়ামী লীগের কর্মী গোলাম রব্বানী। রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া মোড়ে বাস থেকে নেমে সকাল পৌনে ৯টায় তিনি জনসভাস্থলে পৌঁছান। তিনি জানান, সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে ৮টায় বাসে উঠেছেন।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটু জানান, রাজশাহীর সব রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে প্রচুর মানুষ এসেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ বাসে এসেছেন।

রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, ‘ট্রেনগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেড়ে আসছে। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। সিডিউল বিপর্যয়ের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর বিশেষ সাতটি ট্রেন শুধু আজকে (রবিবার) চলবে।’

জনসভাকে কেন্দ্র করে কয়েক ধাপে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল জনসভার সভাপতিত্ব করছেন।

এদিকে রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আগত জনসাধারণের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রবিবার সকাল থেকে মহানগরীর ১৩টি স্পটে ১৩টি গাড়িতে করে এক লাখ ৫০ হাজার বোতল পানি বিতরণ করা হচ্ছে। জনসভায় আগত যে কেউ বিনামূল্যে এই পানি নিতে পারবেন।