নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতারের পর নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার চার দিন পর সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন মৃধা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় স্থানীয় অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এজাহারভুক্ত করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল প্রেস নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক হাসিবুর রহমান এবং অনলাইন ফুড ভ্লগার শওকত মিথুনের নামও রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদান, গুরুতর রক্তাক্ত জখমসহ হুমকি প্রদানের অভিযোগ আনা হয়। সোমবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার তিন জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শহরের শহীদনগর ১ নম্বর গলির বাসিন্দা মো. হানিফের ছেলে মো. জিসান (২৮), কাশেমের ছেলে হানিফ (৪০) ও আব্দুল হাইয়ের ছেলে অনলাইন ফুড ভ্লগার শওকত মিথুন (৪৩)। তারা সবাই মামলার এজাহারনামীয় আসামি।
পুলিশ জানায়, মামলায় আসামি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সহসভাপতি কামরুল হুদা, আইভীর মামাতো ভাই গোলাম সারোয়ার, চঞ্চলসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আরও ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইভীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পথে গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলার তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সিটির সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতারে নগরের দেওভোগ এলাকার বাড়িতে পুলিশ গেলে তার সমর্থক ও এলাকাবাসী ব্যারিকেড সৃষ্টি করে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সাড়ে ছয় ঘণ্টা নাটকীয়তার পর ভোর ৬টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পথে শহরের কালির বাজার এলাকায় গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ৮ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ সিটির সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতারে তার বাড়িতে উপস্থিত হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। আইভীকে গ্রেফতার করতে গেলে তার সমর্থিত লোকজন আইনানুগ গ্রেফতারে বাধা দেন। তারা বাসার সামনের চারপাশের রাস্তায় ট্রাক দিয়ে বালু ফেলে এবং বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন এবং পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আইভীর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ও বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রেফতারের বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় নারী-পুরুষসহ সমর্থকদের জড়ো করেন এবং পুলিশকে আইনি কাজে বাধা দেন।
পরদিন ৯ মে ভোর পৌনে ৬টায় আইভীকে পিকআপভ্যানে উঠিয়ে ডিবি কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হলে তার সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজনাকর স্লোগান, গাড়িবহরে বাধা ও শহরের গলাচিপা এলাকায় গাড়িবহর লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় এসআইসহ তিন জন আহত হন।
নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল প্রেস নারায়ণগঞ্জের সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বলেন, হাসিবুর রহমান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সক্রিয় কর্মী। পরবর্তী সময়ে অনলাইন পোর্টাল প্রেস নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। তাকে এ ধরনের মামলায় গ্রেফতার ও হয়রানি করা নিন্দনীয়। অবিলম্বে তার মুক্তি চাই।
মামলার এজাহারে সাংবাদিককে আসামি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির আহমেদ বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তদন্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য কাউকে আসামি করা হয়নি।’