শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম মানিকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে সব শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফিরোজ হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফটকের সামনে শুয়ে বিক্ষোভ করে। পরে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে বৈঠক করেন প্রশাসনের কর্মকর্তা।

ইউএনও তাহমিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন– উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নওজেশ আরা ও রায়কালী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভপুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালাম মানিক ওই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। এ ঘটনায় গত ২৬ জানুয়ারি ওই ছাত্রী তার মাকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন মণ্ডলের কাছে মৌখিক অভিযোগ করে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এর জেরে বুধবার দুপুরে সভা ডাকেন প্রধান শিক্ষক। ওই বৈঠকে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ডাকা হয়। সে সবার সামনে উত্ত্যক্তের বিষয়টি খুলে বলে। তবে বৈঠকের আগে অভিযুক্ত শিক্ষক বিদ্যালয় থেকে কৌশলে পালিয়ে যান। ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যক্তিরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষককে না পেয়ে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করেন।

খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকজন বিদ্যালয়ে যান এবং পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে ধরে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। ইউএনও, ওসি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েও ফটক থেকে সরাতে পারেননি। বেলা ৩টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে বৈঠকের পর অভিযুক্ত শিক্ষককে পাঠদান থেকে বিরত রাখা এবং তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানায়, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম দুশ্চরিত্র ব্যক্তি। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির একাধিক ছাত্রীকে তিনি উত্ত্যক্ত করতেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদের বিদ্যালয় থেকে বিদায় করার ভয় দেখাতেন তিনি। ওই শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের রেকর্ড আছে তাদের মোবাইল ফোনে। তারা সবাইকে শুনিয়েছে। এরপর প্রধান শিক্ষককে ওই ছাত্রী ও তার মা অভিযোগ করেছেন। তারপরও ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছিল, তাই তারা বিক্ষোভ করে।

অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম মানিক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে এক ছাত্রী এবং তার মা আমার কাছে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। সময়ের অভাবে অভিযোগের ব্যাপারে কাউকে জানাতে পারিনি। বুধবার দুপুরে ওই ঘটনায় বিদ্যালয়ে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করার সময় বিশৃঙ্খলা হয়।’

আক্কেলপুর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তারা অভিযুক্ত শিক্ষককে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে আনার জন্য গাড়িতে তুলেছিলেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বাধায় আনা সম্ভব হয়নি।