কিডনি অপারেশনের সময় গর্ভের যমজ সন্তানসহ নারীর মৃত্যু

ময়মনসিংহ নগরীর ব্রাহ্মপল্লী এলাকার বেসরকারি পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় গর্ভের যমজ সন্তানসহ রেখা আক্তার(২৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।

রেখা আক্তার ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের মাহমুদুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি ১৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। রেখার তিন বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে।

স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে কিডনির পাথর অপারেশনের জন্য স্থানীয় দালালরা অন্তঃসত্ত্বা রেখা আক্তারকে নিয়ে যায় ফুলবাড়িয়া উপজেলার ব্যবসায়ী রফিকের মালিকানাধীন ব্রাহ্মপল্লীর পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রেখার অপারেশন করেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরানগঞ্জ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আশরাফুল হক মোল্লা। সে সময় রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া দেন ডা. আরিফ রব্বানী। অপারেশনের পর রেখা তার গর্ভের যমজ সন্তানসহ মারা গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স ডেকে ময়মনসিংহ শহরতলীর চুরখাই বেসরকারি কমিউনিটি বেজড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ না রাখায় ফের অ্যাম্বুলেন্সে করে যমজ সন্তানসহ রেখার মরদেহ পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে মরদেহ রেখে শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ করেন স্বজনরা। খবর পেয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ এসে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। এর আগেই হাসপাতালে তালা দিয়ে সটকে পড়েন ডাক্তার ও নার্স-কর্মচারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সার্জারি করার সময় রেখা আক্তারের মারাত্মক রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং একপর্যায়ে শকে চলে যান। সে সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান রেখা আক্তার। এ রকম অবস্থায় জোর করেই রেখাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়। রেখার স্বামী মাহমুদুল ইসলাম এই ভুল চিকিৎসার জন্য দায়ী চিকিৎসক, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডা. আরিফ রব্বানী অভিযোগ অস্বীকার করে এর দায় চাপান হাসপাতাল মালিকের ওপর। তিনি বলেন, ‘অপারেশনের পর রোগীকে রক্তের জোগানসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক ম্যানেজমেন্ট করতে না পারায় রোগীর মৃত্যু ঘটেছে।  ডা. আশরাফুল হক মোল্লা সার্জন না হয়েও এই রোগীকে সার্জারি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সার্জনরা। এর আগে নানা অভিযোগে ময়মনসিংহ মেডিক্যালের বহির্বিভাগ থেকে ডা. আশরাফুলকে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িতে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল। পরে তদবির করে ময়মনসিংহ সদরের পরানগঞ্জ হাসপাতালে চলে আসেন।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কেবল জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন ছাড়া এই ধরনের সার্জারি সম্পূর্ণ নিষেধ বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাধিক সার্জন।