নিহতের স্বজনদের অভিযোগের পরপরই বাড়ি থেকে আব্দুল আলী নামে অভিযুক্ত এক প্রতিবেশী সপরিবারে পালিয়ে গেলেও সন্ধ্যার পর ছেলে জুয়েল মিয়াসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. দেবাশীষ বলেন, নিহত শিশুদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে এগুলো কোনও ধারালো অস্ত্রের আঘাত নয়। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত শিশুদেরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রাম থেকে গত শুক্রবার ওই চার শিশু নিখোঁজ হয়।এ ঘটনার পাঁচদিন পর আজ বুধবার সকালে পার্শ্ববর্তী হাওরে মাটি চাপা অবস্থায় তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে পরিবারের কাছে চার শিশুর মরদেহ হস্তান্তর করেছে হবিগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহতদের বাড়িসহ এলাকাজুড়ে চলছে মাতম আর আহাজারি। রাতেই তাদের দাফন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি পুলিশ কয়েকজন ব্যক্তির জুতা ও একটি চাবি উদ্ধার করেছে। আলামতগুলো ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজে লাগবে বলে আশা করছে সিআইডি।
লাশ উদ্ধারের পর হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, দ্রুতই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
দুপুরে সিলেটের ডিআইজি মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের গাফলতি করা হয়নি। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে দ্রুত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা। আমরা দ্রুত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করব।
এজন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কোনও ধরনের সন্ধান দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেন তিনি।
এদিকে, নিহতের স্বজনরা দাবি করেছেন পূর্ব শত্রুতার জের হিসেবে তাদের শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।আর শিশুদের উদ্ধারে পুলিশি তৎপরতা জোরালো ছিল না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
নিহত মনিরের বাবা আব্দাল মিয়া জানান, পার্শ্ববর্তী এলাকার মাতব্বর আব্দুল আলী ও বাচ্চু মিয়া শত্রুতাবশত চার শিশুকে হত্যা করেছে।
নিহত শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া জানান, নিখোঁজের পর বাহুবল থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও তারা কোনও কর্ণপাত করেনি। উল্টো তাদেরকে মিলাদ ও দোয়া-দরুদ পড়ার পরামর্শ দেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তাদের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো না।
শুভর চাচা ফরিদ মিয়া জানান, পাশ্ববর্তী এলাকার মাতব্বর আব্দুল আলীর সঙ্গে সম্প্রতি গাছ থেকে বড়ই পাড়া নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এর জের হিসেবেই তাদের সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে।
শুক্রবার উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজ-এর ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আব্দুল কাদির-এর ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০) নিখোঁজ হয়।
পরদিন শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া বাদী হয়ে বাহুবল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। পরবর্তীতে সোমবার হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র সন্ধান দিতে পারলে ২০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন।
পরে বুধবার সকালে স্থানীয় লোকজন সুন্দ্রাটিকা গ্রামের উত্তর পাড় এলাকায় ধানের জমির পাশে হাত-পা মাটিতে পুঁতে থাকা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব, সিআইডিসহ একাধিক টিম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। দুপুর দেড়টার দিকে ওই চার শিশুর লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
/বিটি/টিএন/
আপ: এইচকে