লাভজনক হওয়ায় মিষ্টিকুমড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। তবে উৎপাদন ভালো হলেও খুচরা বাজার থেকে বেশি দামে মিষ্টিকুমড়া কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, কৃষকরা ক্ষেত ধরে কুমড়া বিক্রি করে দিচ্ছেন, কিন্তু আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা সেই কুমড়া বেশি দামে ওজনে বিক্রি করছেন। এ নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ।
বরিশাল নগরীর বাসিন্দা সাঈদ খান বলেন, ‘সর্বনিম্ন ৩০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন বাজার থেকে কুমড়া কিনেছি। কিছুদিন আগে একটি কুমড়া কেনা যেত ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। ওই কুমড়া এখন কেজি দরে কিনতে গিয়ে আমরা ঠকছি আর লাভ করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তারা যে দামে আনছেন তার দ্বিগুণ দামে কুমড়া বিক্রি করছেন। বিষয়টি বুঝতে পারার পরও আমরা বেশি দামে কিনছি। আসলে এ লাভটা দরকার ছিল কৃষকের জন্য। এ জন্য একটি “কৃষকবাজার” দরকার। যেখানে কৃষক তার উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারবেন। তাতে কৃষক এবং ক্রেতা উভয়েই লাভবান হবেন।’
বরিশাল সদর উপজেলার লামছড়ি থেকে কুমড়া ক্ষেত কিনে পাইকারি বাজারে নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. লিটন জানান, ১২০ শতাংশ জমির কুমড়া তিনি কিনেছেন ৮৩ হাজার টাকায়। ওই টাকার মধ্যে ১০ হাজার তার খরচ রয়েছে। ক্ষেত থেকে কুমড়া সংগ্রহ করে ট্রলারে করে পাইকারি বাজারে এনে তা আবার আড়তদারদের গদিতে তুলে দিতে হয়। এ কাজ লিটন নিজে করেন এবং আরও দুই জন তার সঙ্গে রয়েছে। আড়তদারদের কাছে ১৮ টাকা কেজি দরে কুমড়া বিক্রি করেছেন। প্রতিটি কুমড়া ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। একটি ঝুড়িতে তারা ৫০ থেকে ৬৩ কেজি পর্যন্ত কুমড়া বহন করতে পারেন। তবে কৃষকের কাছ থেকে নগদ টাকায় কিনতে হলেও আড়তদাররা কিছু টাকা বাকি রাখেন। ওই টাকা কিছুদিন পর নিতে হয়। তারপরও যা পান তাতে ভালো টাকা লাভ হয় বলে দাবি করলেন তিনি।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বায়লাখালীর আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন জানিয়েছেন, গতবার তিনি এক একর জমিতে প্রায় আড়াই হাজার কুমড়া গাছ লাগিয়েছেন। তা থেকে ৬০ মণ কুমড়া পেয়েছেন। গড়ে ৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তিনি আবারও কুমড়া চারা লাগিয়েছেন। যা থেকে ফুল দেওয়া শুরু হয়েছে।
ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে কৃষকবাজারের ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বলেছেন, ‘প্রতিটি জেলায় কৃষকবাজার করার বিষয়টি সরকারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষিকাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকও লাভবান হবেন। আমরাও চাচ্ছি বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ ফাহিমা হক জানিয়েছেন, এ বছর এক হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে সুইটি, সুইটগোল্ড, বারোমাসী, সুপ্রিমা, বারি, মনিকা, প্রতি, প্রণয়, স্থানীয় জাতের কুমড়া উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। একই সঙ্গে কুমড়ার ওজনও ভালো হয়েছে। সর্বোপরি কুমড়া চাষে কৃষক লাভবান হয়েছেন।’