কোটি টাকার শোধনাগার থাকতেও পয়োবর্জ্য ফেলা হচ্ছে ড্রেনে

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইড-এর অর্থায়নে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশালাকৃতির শোধনাগার থাকতেও বাসাবাড়ি থেকে সংগৃহীত পয়োবর্জ্য ড্রেনে ফেলছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার কর্মীরা। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জনভোগান্তি। আর বর্জ্য শোধনাগারটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, শোধনাগারের ভ্যাকুট্যাক ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। পৌরসভার তদারকি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা চুপ থাকায় এই অবস্থা প্রকট হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার হিউম্যান ফেসকল ট্রিটমেন্ট প্লান্টের প্রধান গেটের সামনেই একটি ভ্যাকুট্যাক থেকে মানববর্জ্য ড্রেনে ফেলছে। বাসাবাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে সংগ্রহ করা এসব বর্জ্য ট্রিটমেন্টের (শোধনের) জন্য প্লান্টের ভেতরে না দিয়ে খোলা জায়গায় কেন ফেলছেন? জানতে চাইলে ভ্যাকুট্যাক চালক সানু বলেন, ‘গেটবন্ধ তাই ড্রেনে ফেলছি।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেশ কিছুদিন থেকে ড্রেনে এসব বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে সকালের দিকে এ কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। ফলে রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রচুর রোদের তাপে খোলা জায়গার এই ময়লার অসহনীয় গন্ধে বিপাকে পড়েছে আশপাশের মানুষ। এদিকে, প্লান্টে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ রোধের পরিকল্পনাও ভেস্তে যাচ্ছে। ফলে প্লান্টটি অকেজো হয়ে পড়েছে।

পৌরসভার সচিব সাইদুজ্জামান বলেন, ‘প্লান্টের পন্ডসগুলো উপচে গেছে। তাই সংগ্রহ করা বর্জ্য অন্যত্র মজুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ড্রেনে ফেলা ঠিক হয়নি। প্লান্ট তদারকি কর্মচারীরা সময়মতো না থাকায় হয়তো ড্রেনে ফেলেছে।’

নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনোভাবে পয়োবর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলা যাবে না। এতে পরিবেশ দূষণ ঘটবে। আমাদের অগোচরে হয়তো এমনটা হয়েছে।’

তদারকি সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের সৈয়দপুর শাখা ম্যানেজার নজরুল ইসলাম তফাদার বলেন, ‘বর্জ্য যদি বাইরে কোথাও ফেলে তা পৌরসভার দায়। আমাদের প্লান্টে কোনও সমস্যা নাই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় তিন জন কেয়ারটেকার নিয়োজিত। গেট বন্ধ থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। আর যদি বন্ধও থাকতো তাহলে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল। তা না করে মিথ্যা অজুহাতে ড্রেনে ফেলায় বিষয়টি গোঁজামিল মনে হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী মিটিংয়ে আছে অজুহাতে সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে যান। পরে মোবাইল ফোনে বার বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘প্রয়াত মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকারের প্রচেষ্টায় ওয়াটার এইডের সহায়তায় ও এসকেএস ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এই প্লান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি দেখতে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, এমপি, সচিবরা এসেছিল। যাতে তারাও এমন প্লান্ট করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই শোধনাগার সৈয়দপুরের সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন মানববর্জ্যের কুফল থেকে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে তেমনি এ থেকে উৎপাদিত জৈব সার কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটাবে। পাশাপাশি পৌরসভার আয়ও বাড়বে। অথচ এটা রেখে উন্মুক্ত স্থানে মানববর্জ্য ফেলা হচ্ছে।’