কুমিল্লায় চৌদ্দগ্রামের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যা মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন, মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) জহিরুল হক সেলিম।
রবিবার (১২ মে) দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় মামলার ২৩ আসামির মধ্যে ৫ জনকে খালাস দেওয়া হয়। রায় ঘোষণাকালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিই অনুপস্থিত ছিলেন। আসামিদের মধ্যে শুধু যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত একজন ও খালাসপ্রাপ্ত দুজন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন চৌদ্দগ্রাম আলকরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন বাচ্চু, আলকরা ইউনিয়নের কুলাসার গ্রামের সালাউদ্দিন, আব্দুর রহমান, মফিজুর রহমান খন্দকার, জিয়াউদ্দিন শিমুল, জাহিদ বিন শুভ, রেজাউল করিম বাবলু, মো. রিয়াজ উদ্দিন মিয়াজী ও মমতা আমির হোসেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আলকরা ইউনিয়নের কুলাসার গ্রামের নুরুল আলম, কফিল উদ্দিন, নুরুন্নবী সুজন, ইকবাল আহমেদ, সাইফুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান খন্দকার, মোশারেফ হোসেন, মো. আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী হোসেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন আলকরার কুলাসার গ্রামের নজরুল ইসলাম শিমুল, আজিম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন সোহেল, আতিকুর রহমান নান্টু ও ইউসুফ হারুন মামুন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম আলকরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় যুবলীগ নেতা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে জামাল উদ্দিনের ওপর হামলা করে তাকে আহত করেন। এ বিষয়ে জামাল উদ্দিন নিজে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলার করার পর চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন বাচ্চু ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের পদুয়ায় সড়কের ওপরে চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর নেতৃত্বে অন্য আসামিরা গুলি করে ও কুপিয়ে জামালকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহত জামালের বড় বোন জোহরা আক্তার বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) জহিরুল হক সেলিম বলেন, ‘মামলায় ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৯ জনের যাবজ্জীবন ও মামলা থেকে পাঁচ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত একজন ও খালাসপ্রাপ্ত দুজন আসামি উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক আছেন।’