কুড়িগ্রামের চিলমারীর দুর্গম চরাঞ্চলে গাড়লের খামার গড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রফিকুল ইসলাম। এটি রংপুর বিভাগের বৃহৎ ও জেলার একমাত্র গাড়ল খামার বলে দাবি খামারির। উপজেলার চরশাখাহাতিতে শতাধিক গাড়ল নিয়ে এই খামার গড়েছেন তিনি। গাড়ল বেচে বছরে ৩০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
রফিকুল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট। গত বছরের শেষ দিকে নিজ বাড়িতে গাড়লের খামার গড়েন তিনি।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ল দেখতে অনেকটা ভেড়ার মতো। তবে আকারে ও ওজনে ভেড়ার চেয়েও বড়। এগুলো পশ্চিমবঙ্গের নাগপুরের ভেড়ার ক্রস ব্রিড। এক বছর বয়স থেকে বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। শুরুতে একটি করে দিলেও দুই বছর বয়স থেকে একাধিক বাচ্চা দেয়।
সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের শাখাহাতিরচরে গিয়ে দেখা যায়, চরজুড়ে শতাধিক গাড়লের বিচরণ। সঙ্গে থাকা রাখাল সোহেল রানা জানলেন এগুলো সাবেক সেনাসদস্য রফিকুলের। এরপর কথা হয় রফিকুলের সঙ্গে।
খামারে গিয়ে দেখা যায় টিনশেডের ঘর। গাড়লের জন্য তৈরি করা হয়েছে মাচা। গাড়লের খাবারের জন্য খামারের পাশেই করেছেন ঘাস আবাদ।
রফিকুল জানান, খামার করতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গাড়লের খামার গড়েন। প্রথম দফায় মেহেরপুরের এক খামারির মাধ্যমে ভারত থেকে ৫২টি গাড়ল নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬টি আনেন। এরপর ৮৭টি গাড়ল নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু। এরমধ্যে অধিকাংশই ছিল বাচ্চা। দুই মাসেই আয় শুরু হয়। গত আট মাসে এই খামার থেকে ১৪টি বাচ্চা দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন তার খামারে ১০২টি গাড়ল আছে।
ছাগল-ভেড়ার চেয়ে গাড়ল পালন বেশি লাভজনক জানিয়ে এই খামারি বলেন, ‘কুড়িগ্রামের আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি গাড়ল পালনের জন্য উপযোগী। আমাদের চরে যেসব ঘাস হয়, তা গাড়লের পছন্দের খাবার। এর মাংস ও দাম ভেড়ার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে এটি লাভজনক।’
রফিকুল আরও বলেন, ‘একটি বাচ্চা ভেড়ার দাম ১২-১৫শ’ টাকা, কিন্তু একটি গাড়লের বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একটি ভেড়া সর্বোচ্চ ৩০ কেজি হতে পারে। কিন্তু খাবার উপযোগী একটি গাড়ল ৪০ কেজি থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। আমার খামারে ৭৮ কেজি ওজনের গাড়ল আছে। একটি খামারে ১০০টি গাড়ল পালন করলে বছরে অন্তত ৩০ লাখ আয় করা সম্ভব।’
আসছে কোরবানির ঈদে ৬০টি গাড়ল বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি উল্লেখ করে এই খামারি আরও বলেন, ‘এগুলোর বাজার মূল্য অন্তত ৯ লাখ টাকা হতে পারে।’
রফিকুলের খামার পরিদর্শন করেছেন চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘চিলমারীর চরাঞ্চল ছাগল-ভেড়ার পাশাপাশি গাড়ল পালনের জন্য উপযুক্ত ভূমি হতে পারে। রফিকুলের গাড়ল খামার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে এই অঞ্চলের মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। চিলমারীতে গাড়ল পালনে সফলতা পেলে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে আগামীতে ছাগল-ভেড়ার পাশাপাশি গাড়ল পালনেও উদ্বুদ্ধ করা যায় কিনা, সেটি বিবেচনায় আনবো আমরা।’
গাড়ল পালন অত্যন্ত লাভজনক জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জেলায় গাড়লের খামার আছে বলে আমার কাছে তথ্য নেই। তবে জেলার ভূ-প্রকৃতি গাড়ল পালনের উপযোগী। গাড়লে মাংসের পরিমাণ বেশি। আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এটি অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক।’