শেবাচিমে র‌্যাগিংয়ের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার ৬ সাংবাদিক

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে র‌্যাগিংয়ের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শিক্ষকদের হামলা শিকার হয়েছেন ছয় গণমাধ্যমকর্মী। শনিবার (২৬ আগস্ট) এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন সংবাদকর্মীরা। পরে সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের মধ্যে বৈঠকে বিষয়টির সমঝোতা হয়। অধ্যক্ষ এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশ্বস্ত করেন।

হামলার শিকার গণমাধ্যমকর্মীরা হলেন- সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদক শাকিল মাহমুদ, চিত্র সাংবাদিক সুমন হাসানসহ, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা, চিত্র সাংবাদিক রুহুল আমিন, এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার ফিরোজ মোস্তাফা ও চিত্র সাংবাদিক আজিম শরিফ।

হামলার শিকার চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদক কাওছার হোসেন রানা জানান, গত বৃহস্পতিবার তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী র‌্যাগিংয়ের শিকার হন। ওই ঘটনার বিচার চাইতে আজ শনিবার সকালে ছাত্রী ও তার মা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে যান। এ সময় চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, সময় টেলিভিশন ও এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিবেদক ও চিত্র সাংবাদিকরা যান তথ্য সংগ্রহে। ভুক্তভোগীরা তাদের বক্তব্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক ডা. বাকি বিল্লাহ ও তার সহযোগীরা অতর্কিতে হামলা চালান।

তিনি আরও জানান, হামলাকার শিকার গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবাদ জানালে তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এমনকি সেখানে থাকা চেয়ার তুলে তাদের পেটানো হয়। এতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ও স্ট্যান্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা তাদের ছাত্রদের সহায়তা নেন। ক্লাস রুম থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি হামলার শিকার সাংবাদ কর্মীদের সেখান থেকে বের করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে গেটে তালা মেরে দেন। খবর পেয়ে সাংবাদকর্মীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে সাংবাদিক নেতা ও ঊর্ধ্বতন পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদক শাকিল মাহমুদ জানান, দুপুর ১২টার দিকে খবর পান মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রীকে র‌্যাগিং করা হয়েছে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রীর মাকে পেয়ে যান। তার সাক্ষাৎকার নেন। এরপর র‌্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রীকে একটি কক্ষে নিয়ে তারও সাক্ষাৎকার নেন। এরই মধ্যে শিক্ষক ডা. বাকি বিল্লাহর নেতৃত্ব শিক্ষক ও কর্মচারীরা এসে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা হামলা চালান। এমনকি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। চেয়ার তুলে পেটানো হয়।

র‌্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে একটি কক্ষে আটকে নির্যাতন চালানো হয়। বেশ কয়েকবার এ নির্যাতন চালানোর কারণে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে এ জন্য অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে তিনি কলেজে এসেছেন।

গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার আর পুনারাবৃত্তি হবে না। এ জন্য অভিযুক্তরা হামলার শিকার গনমাধ্যমকর্মীদের কাছে হাতজোর ক্ষমা চেয়েছেন। তারাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।’

ছাত্রীকে র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এখানে কোনও র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। একটি কক্ষে তিন জন ছাত্রী থাকেন। এদের মধ্যে কেউ দিনে পড়ে আবার কেউ রাতে পড়ে। যে দিনে পড়ে সে রাতে ঘুমায়। আর যে রাতে পড়ে সে দিনে ঘুমায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব হলে তারা শিক্ষকদের কাছে না এসে সিনিয়রদের কাছে যায়। কিন্তু তারা ঠিকমতো হ্যান্ডিলিং করতে পারেনি। পরে বিষয়টির ডালপালা গজায়।’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই ছাত্রীটি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। এ কারণে তাকে মানসিক চিকিৎসক দেখানো হচ্ছিল। এরই মধ্যে সংবাদকর্মীরা সেখানে গেলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।’

ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আলী আশরাফ ভূইয়া বলেন, ‘শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে এসে সাংবাদিকরা বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। এরপর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছে তাদের ভুল হয়েছে। এ কারণে তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। এতে উভয় পক্ষ থেকে ভালো একটা মীমাংসা হয়েছে। আর অধ্যক্ষ আশ্বস্ত করেছেন সাংবাদিকরা কোনও সময় কলেজে আসলে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না।’