ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা: শিশু রবিউলের পরিবারের খোঁজ মিলেছে

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দু’দিন পর হাসপাতালে ভর্তি আহত শিশু রবিউলের (৮) বাবার খোঁজ পাওয়া গেছে। শিশুটির স্বজনদের সন্ধানে গণমাধ্যম খবর প্রকাশের পর বাবা মিলন মিয়া ছেলের সন্ধান পান। পরে ভৈরবের স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বাবা-ছেলের ভিডিও কথোপকথন হয়।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাতে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ডা. বুলবুল বলেন, ‘আমরা খুব খুশি হয়েছি রবিউল তার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে। আমি কিছুক্ষণ আগে তার বাবা মিলন মিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। মিলন ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে থাকেন। সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত। তবে কীভাবে তার ছেলে ভৈরবে পৌঁছালো সে বিষয়ে তিনি তেমন কিছু বলতে পারেনি। তিনি আসলে সব বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া যাবে। আমরা যাবতীয় প্রমাণাদি মিলিয়ে তাদের পরিচয়ের সত্যতা পেলে মিলন মিয়ার কাছে রবিউলকে হস্তান্তর করবো। তবে রবিউলের মুখ থেকে আমরা জেনেছিলাম তার মা নেই। বাকিটুকু তার বাবা আসলে জানা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনার পর সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। তারপর নিয়মিত পরিচর্যায় গত দুই দিনে সে অনেকটা ভালো আছে। দুর্ঘটনার পর সে অজ্ঞান ছিল। পরে জ্ঞান ফিরে একটু সুস্থ হলে, সে আমাদের জানিয়েছিল তার নাম রবিউল। কিন্তু ঠিকানা বলছে ভিন্ন ভিন্ন। একবার বলছে তার বাড়ি নরসিংদী, আরেকবার বলছে ঢাকার গুলিস্তানে। তবে বুধবার সকালের দিকে সে জানিয়েছে, তার বাবার নাম সুমন আর তাদের বাড়ি বরিশাল। সে ট্রেনেই থাকে, এ ছাড়া তেমন কিছু বলতে পারছিল না।’

এ ব্যাপারে প্রথম আলো বন্ধুসভার ভৈরবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদরাতুল রশিদ পিয়াল বলেন, ‘ঢাকায় মিরপুরে কর্মরত এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে রবিউলের পরিবারের সন্ধান জানতে পারি আমরা। রবিউলের বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আজ রাতে ভৈরব এসে পৌঁছাবেন। তারপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রবিউলকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

এ ব্যাপারে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত শিশুর স্বজনদের খোঁজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় খবর প্রকাশ হয়েছে। তাই শিশুটির বাবা দ্রুতই তার পরিবারের সন্ধান পেয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট শিশুটিকে খুঁজে পেতে জোড়ালো ভূমিকা পালন করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিশু রবিউলকে আমরা তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবো।’

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব জংশনের সিগন্যাল আউটার এলাকায় ঢাকাগামী এগারসিন্ধুর গোধূলি ট্রেনের পেছনের দুটি বগিতে চট্টগ্রামগামী কার্গো ট্রেনের ধাক্কা লাগে। এতে ১৮ জন নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন  শতাধিক। মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনায় এগারসিন্দুর ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়।