কুমিল্লায় সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে আনার ১২ দিন পর এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, চিকিৎসকের ভুলে শিশুটি মারা গেছে। শনিবার বিকাল ৫টায় কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকার হলি কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ধস্তাধস্তি করে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোরশেদুল আলমের বিরুদ্ধে।
মারা যাওয়া ওই শিশু কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের বাড়াইপুর গ্রামের মো. সোলেমানের ছেলে মো. হোসাইন।
এ ঘটনায় ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন বিপ্লব হোসেন ধস্তাধস্তিতে আহত হয়েছেন। তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছেন সহকর্মীরা।
নিহত শিশুর বাবা সোলেমান বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর আমার ছেলেকে সর্দি-কাশির সমস্যা হওয়ায় হলি কেয়ার হাসপাতালে আনি। তখন ডা. আব্দুল কাইয়ুমের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ নভেম্বর শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউতে) নেওয়া হয়। এর আগে তার ইকো বা হার্টের কোনও পরীক্ষা করেননি চিকিৎসকরা। তারা ১০ অক্টোবর আমাদের হঠাৎ করেই জানালেন আমার সন্তানের হার্টের চার ভাগের তিন ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।’
কেন ভুল চিকিৎসার অভিযোগ বা চিকিৎসককে দোষারোপ করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি চিকিৎসক প্রথম দিনই বলতেন, আমার সন্তানের হার্টের সমস্যা তাহলে আগেই তাকে ঢাকায় বা অন্য কোথাও নিতাম। কিন্তু তারা আমাদের কিছুই জানাননি। আমার সন্তানের হার্টের সমস্যা বোঝার জন্য কোনও পরীক্ষাও করায়নি। তাই আমি চিকিৎসক ছাড়া আর কাকে দোষারোপ করবো। আমরা এই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবো।’
শিশুর মা শিমা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্য প্রয়োজনে রক্ত বিক্রি করতাম। ডাক্তার যা বলেছেন আমরা তাই করেছি। কিন্তু ডাক্তার আমাদের সন্তানকে সময়মতো চিকিৎসা দেননি। আমরা জানতাম সর্দি কাশি; হঠাৎ দুই দিন আগে শুনি হার্টের সমস্যা। আমার মানিক আমার সঙ্গে কত হাসতো! আমার মানিককে ফেরত চাই!’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এ বিষয়ে ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন বিপ্লব বলেন, ‘শিশুটির মৃত্যুর অভিযোগ পেয়ে আমরা হাসপাতালে যাই। আমার সঙ্গে যমুনা টেলিভিশনের ও সময় টেলিভিশনের সহকর্মীরা ছিলেন। আমরা পরিচালকের বক্তব্য নেওয়া শেষে হাসপাতাল থেকে নামছিলাম। দাঁড়িয়ে সাইনবোর্ডের ফুটেজ নেওয়ার সময় ডাক্তার মোর্শেদুল আলম এসে আমাকে ধাক্কা দেন। “তুই কেন সাইনবোর্ডের ছবি তুলচ?” এই বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ক্যামেরা টান দেন তিনি। এ সময় তিনি চিৎকার দিয়ে “কে কোথায় আছস? তারে ধর” বলে ডাক দেন। পরে আমার হাত মোচড় দিয়ে ক্যামেরা নিয়ে যান। আমি হাতে ব্যথা পেলে ক্যামেরা ছেড়ে দিই৷ তখন তিনি ক্যামেরা তার রুমে নিয়ে যান।’
এদিকে, হাসপাতালে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি লুৎফর রহমান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক কাইয়ুমকে খুঁজে না পাওয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোরশেদুল আলম ক্যামেরা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সাংবাদিককে নিচে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেছি। তারা কেন দেখা করেনি? তাই আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। রোগীর অভিযোগ থাকলে থানায় অভিযোগ করতে বলেন।’
এ বিষয়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার বলেন, ‘হলি কেয়ার হাসপাতালের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’