এক থানায় ১১ দিনের মধ্যে তিন ওসি, রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভ

মাত্র ১১ দিনের মধ্যে রংপুরের বদরগঞ্জ থানায় তিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রদবদল করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মাঝে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজের পছন্দের এবং বিশ্বস্ত ওসিকে রাখার জন্য একটি মহল পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযোগের তীর স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যের দিকেই ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী।

রংপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জুলাই বদরগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে নজরুল ইসলাম মজুমদার যোগ দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গত ২ নভেম্বর তাকে বদলি করা হয়। ওইদিনই  এই থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন সিদ্দিকুল ইসলাম। এর ১১ দিনের মাথায় ১৩ নভেম্বর সিদ্দিকুল ইসলামকেও বদলি করা হয়। নতুন ওসি হিসেবে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রংপুরের তারাগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল লতিফকে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত  তিনি বদরগঞ্জ থানায় যোগদান করেননি।

এ ব্যাপারে বদলির আদেশ পাওয়া ওসি আব্দুল লতিফ সাংবাদিকদের জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি বদরগঞ্জ থানায় যোগদান করবেন।

এদিকে, মাত্র ১১ দিনের মধ্যে তিন জন ওসির যোগদানের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি আনিছুল ইসলাম মণ্ডল জানান, ‘আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপির বিশেষ অনুরোধে বদরগঞ্জ থানায় ঘন ঘন ওসির পদায়ন করা এবং পছন্দ না হলে বিদায় করা হচ্ছে। এর মূল কারণ, সামনের সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় এমপি ডিউক চৌধুরী নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা পেতে এভাবে থানার ওসির বারবার রদবদল ঘটিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছেন।’

বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিশেষ সুবিধা পেতেই নিজের আজ্ঞাবহ অফিসারকে থানায় আনতে চান। এ জন্য তারা ঘন ঘন ওসির রদবদল করাচ্ছেন। এতে সরকারি কর্মকর্তারা বিব্রত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘন ঘন যদি ওসি বদলি করা হয়ে থাকে, সেটা পুলিশ বিভাগের ব্যাপার। এর সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। যেসব রাজনীতিবিদ আমার বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ করেছেন তারা দেউলিয়া। বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং নৌকার সম্পর্ক। কিছু দেউলিয়া ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদ আমার জনপ্রিয়তায় ভিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। এটি সবাই জানে। এটি ঠিক নয়।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বদলি হওয়া থানার সাবেক এক ওসি অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপির আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ না করায় যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই তাকে বদরগঞ্জ থানা থেকে বদলি করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের জানান, থানার ওসির বদলি করেন পুলিশ সুপার। এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।