বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্যের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে একটি হেলিকপ্টারে মরদেহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পৌঁছায়। পরে তার লাশ উপজেলার সাহাপাড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় ভবানীপুর গোরস্থানে জানাজা শেষে মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। 

রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা সাহাপাড়ার শ্যামপুরে। সোমবার (২২ জানুয়ারি) বেনাপোলের ধান্যখোলা জেলেপাড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিজিবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়।

রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়ি শ্যামপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার চার বছরের মেয়ে ও চার মাস বয়সী ছেলেসন্তান রয়েছে। স্ত্রী নাসরিন ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, ‘দুইটা অবুঝ বাচ্চা আর আমাকে একা ফেলে চলে গেলো। তাদের মানুষ করবো কীভাবে? ওকে ছাড়া আমি চলবো কীভাবে?’

রইশুদ্দীনের বাবা কামরুজ্জামান জানান, তার তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রইশুদ্দীন ছিলেন পরোপকারী। নাতি-নাতনিকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের সহায়তা চান তিনি।

বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, সোমবার ভোর ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্টসংলগ্ন এলাকায় একদল গরু চোরাকারবারিকে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখে বিজিবির টহল দল। সে সময় টহল দলের সদস্যরা ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলছুট হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরে জানা যায়, বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় জালিয়াপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সোমবার ভোরে তারা অন্তত ৭-৮ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছেন। পরে সকালে সীমান্তের ওপারে এক যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

তারা বলেন, ‘ধান্যখোলা জালিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভোরে গরু চোরাকারবারিদের ধাওয়া করার সময় বিএসএফের ছোড়া গুলিতে আহত হন মোহাম্মদ রইশুদ্দীন নামের ওই বিজিবি সদস্য। এরপর বিএসএফ সদস্যরা তাকে ভারতের বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়।’

রইশুদ্দীন নিহত হওয়ার দুদিন পর মরদেহ ফেরত পায় বিজিবি। যশোর জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে। সেখান থেকে আকাশপথে হেলিকপ্টারে মরদেহ নিয়ে আসা হয় শিবগঞ্জে। হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় নিহতের পরিবারের সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি এবং যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছালে শোকে ভারি হয়ে ওঠে এলাকা। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজ গ্রাম উপজেলার ভবানিপুর গোরস্থানে জানাজা শেষে মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।