কয়লা নিয়ে পশুর নদে আবারও ডুবলো কার্গো জাহাজ

বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের পশুর নদের নৌ চ্যানেলে ৯৫০ মেট্রিক টন জ্বালানি কয়লা নিয়ে ‘এম ভি ইশরা মাহমুদ’ নামে আরও একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। এ সময় জাহাজের ১১ নাবিক সাঁতরে তীরে উঠে রক্ষা পান। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পশুর নদের চরকানা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বন্দরের ৬ নম্বর মুরিং বয়ায় অবস্থান করা মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী মার্চেন্ট শিপ ‘এমভি পারাস’ থেকে কয়লা বোঝাই করেছিল কার্গো জাহাজটি। যশোরের নওয়াপাড়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য নেওয়া হচ্ছিল এই জ্বালানি কয়লা।

কার্গো জাহাজটির মাস্টার কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কয়লাবোঝাই করে যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তারা। ওইদিন পশুর নদের বানিশান্তা বাজার বয়ায় নোঙরে রাখা হয় কার্গো জাহাজটি। সেখানে জাহাজটিতে তলা ফেটে পানি ঢুকতে শুরু করে। সেখান থেকে দ্রুত ছেড়ে এসে পশুর নদের চরকানা এলাকায় আসামাত্রই ডুবতে থাকে। এ সময় জাহাজে থাকা ১১ নাবিক দ্রুত সাঁতরে কূলে উঠে প্রাণ বাঁচান। পরে কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা অপসারণ করে পাশে অবস্থান করা একটি বার্জে রাখতে শুরু করে মালিকপক্ষ।’

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, ‘কয়লা নিয়ে কার্গো জাহাজটি পশুর নদের চরে ডুবে গেলেও বন্দরের নৌ চ্যানেল নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে।’ দুর্ঘটনার পর পশুর চ্যানেলে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পশুর নদে ধীরে ধীরে ডুবতে থাকে কার্গো জাহাজটিএদিকে, কয়লা নিয়ে জাহাজডুবির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়লা একটি বিষাক্ত পদার্থ। এই কয়লা জোয়ার-ভাটায় নদীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে জলজ প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হবে।’ দ্রুত এই কয়লা অপসারণ করাসহ কয়লাবাহী জাহাজের চালকদের আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

এর আগে গত ১৭ নভেম্বর ৮০০ টন কয়লা নিয়ে পশুর নদে ডুবে যায় একটি কার্গো জাহাজ। ১৬ অক্টোবর ক্লিংকার নিয়ে ওই নদের চার নম্বর বয়া এলাকায় ডুবে যায় আনমনা-২ নামে একটি কার্গো জাহাজ।

একই এলাকায় ২০২২ সালের ৫ মার্চ ৬০০ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় এমভি নওমী নামের আরও একটি কার্গো জাহাজ। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৭০০ টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি বিবি-১১৪৮’ ডুবে যায় নদের বানিশান্তা এলাকায়। একই বছরের ৫ মার্চ ৫০০ টন কয়লা নিয়ে ক্রিক বয়ায় ডুবে যায় ‘ইফসিয়া মাহী’ কার্গো জাহাজ। ৮ অক্টোবর নদের চিলা এলাকায় ড্যাপ সার নিয়ে ডুবে যায় ‘এমভি দেশবন্ধু’ কার্গো জাহাজ। ১৫ নভেম্বর ‘এমভি ফারদিন-১’ ডুবে যায় ৬০০ টন কয়লা নিয়ে। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল ৭৭৫ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় ‘এমভি বিলাস’ কার্গো। তার আগে ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি ৭০০ টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি আইজগাতি’ কার্গো ডুবে যায় মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায়।

আরও খবর: বারবার কয়লা-সারবাহী নৌযানডুবি, হুমকিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য