জোহা কার হেফাজতে?

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা কার হেফাজতে রয়েছেন? এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। তার পরিবারের অভিযোগ, তিনি বুধবার মধ্যরাত থেকে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। তাহলে তাকে কি অপহরণ করা হয়েছে নাকি কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তুলে নিয়ে গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী? এর জবাব এখনও পাওয়া যায়নি। কোনও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটক করেছে কিনা বৃহষ্পতিবার বিকালে এ তথ্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাংলা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সেটা তিনি জানেন না। তবে যদি কোনও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে থাকে, তাহলে তাকে আদালতে ওঠানো হবে। এরপরই জোহা আসলে কার হেফাজতে আছেন এ প্রশ্ন উঠে আসে।

জোহার নিখোঁজের সংবাদটি বাংলা ট্রিবিউনই প্রথম প্রকাশ করে। এরপর নানা পরিচয়ে বাংলা ট্রিবিউনে ফোন করে বলা হয়, সংবাদটি সঠিক নয়। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করা সঠিক হয়নি। এমনকি জোহার নিজের প্রতিষ্ঠান ‘ইনসাইড ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ এর নাম ভাঙ্গিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে ফোন করে বলা হয়, তিনি তাদের কাছেই আছেন। তাহলে তারা পরিবারের সঙ্গে কেনও যোগাযোগ করছেন না বলা হলে তারা ফোনের লাইন কেটে দেন।  পরে বাংলা ট্রিবিউনের  পক্ষ থেকে ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এরপর জোহার প্রতিষ্ঠানের মোবাইল নম্বর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে নম্বরটি থেকে ফোনটি করা হয়েছে সেটি জোহার প্রতিষ্ঠানেরই নম্বর নয়। পরে জোহার প্রতিষ্ঠানের টিঅ্যান্ডটি নম্বরে যোগাযোগ করেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।  

জোহার শ্যালক মাহমুদ হাসান চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ তথ্য একেবারেই মিথ্যা। ফাউন্ডেশনের সব সদস্যই তখন জোহার পরিবারকে সহানুভূতি জানাতে তার বাসায় ছিলেন।

অনেক স্পর্শকাতর ঘটনায় দেশের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছিলেন তানভীর হাসান জোহা। বিভিন্ন ঘটনায় জোহাকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিলো। তখন দেশের কোনও তদন্ত সংস্থাই জোহার ওইসব বক্তব্যের প্রতিবাদ করেনি।

এদিকে জোহা নিখোঁজ হওয়ার পরও দেশের কোনও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটকের কথা জানায়নি। তবে বাংলা ট্রিবিউনের অপর একটি সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘তানভীর জোহার নিখোঁজ রহস্যের দ্রুত সমাধান হউক সে প্রত্যাশা এবং চেষ্টা আমাদের সকলের। তবে খবরে প্রকাশিত দুটি বিষয়ে আলোকপাত প্রয়োজন অনুভব করছি। তাভেল্লা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তানভীরের সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং বেশ কিছু অর্থও তার পেছনে ব্যয় করা হয়েছে কিন্তু মিসগাইডিং কিছু তথ্য প্রদান ছাড়া কোনওরকম প্রযুক্তিগত সহায়তা তার কাছ থেকে পাইনি। আর এটিএম বুথ কেলেঙ্কারির অনেক আগে থেকেই আমরা তার প্রযুক্তিজ্ঞানের দৌড় দেখে তার ওপর আস্থা হারিয়েছি। এটিএম বুথের ঘটনা সংঘটনের আগে থেকেই সে অন্য এজেন্সির সঙ্গে কাজ করছে। ফলে এটিএম বুথ মামলার তদন্তের সঙ্গে তার কোনওরূপ সম্পর্ক ছিল না। শুরু থেকেই এ দুটি মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত বলে দায়িত্ব নিয়েই আমি এ বক্তব্য তুলে ধরছি।’

এর আগে বৃহষ্পতিবার দুপুরে জোহার স্ত্রী ডা. নুরুন নাহার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জোহা কোথায় আছেন তিনি জানতে চান। এজন্য তিনি প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, জোহা সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থেকে দেশের জন্য কাজ করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার কাছে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে যখনই কোনও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে তখনই তিনি তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে জোহা নিজেও বিভিন্ন সময় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, দেশের তদন্ত সংস্থাগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছিলেন।

বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে অপহৃত হন তানভীর হাসান জোহা। রাত ১২টার দিকে স্ত্রী ডা. কামরুন নাহারের সঙ্গে তার কথা হয়। তখন জোহা জানিয়েছিলেন, তিনি সিএনজিচালিত অটোরিক্সাযোগে বাসায় ফিরছেন ইয়ামির আহমেদ নামের এক বন্ধুসহ। কিন্তু, রাত দেড়টার দিকে ওই বন্ধু ফোনে জোহার পরিবারকে জানান, জোহা অপহৃত হয়েছেন।

তানভির হাসান জোহা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প ‘সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ’-এর ডিরেক্টর (অপারেশন) হিসেবেও কাজ করেন। তবে এই প্রকল্পটি গত দুই মাস ধরে স্থগিত আছে। শিগগির এ প্রকল্প চালু হওয়ারও কথা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিভার্জ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ডলার সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তদন্তের কাজে প্রযুক্তি সহায়তা দিতে তাকে ওই কমিটিতে নেওয়া হয়।

সম্প্রতি জোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে। কারণ আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আমন্ত্রণে আমি জঙ্গি তৎপরতাসহ সাইবার অপরাধের বড় বড় ঘটনা তদন্তে সহায়তা করেছি। তখন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। এখন একটি মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।’

/টিএন/