সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘দেশের মানুষ এটা বুঝতে শুরু করেছে যে, সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশকে আর দুই ভাগ করা যাবে না। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক খেলা। এই খেলায় বা এই ফাঁদে বাংলাদেশের মানুষ আর পা দেবে না।’
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘরে মাসব্যাপী লোকজ উৎসব ও কারুশিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা এ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে একটা জিনিসকে আমাদের সামনে এমনভাবে হাজির করা হয়েছে, যেটা দিয়ে আমরা জাতিকে দুই ভাগ করেছি। এই দুই ভাগ করার ফলে জাতির ভেতরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে এই ৩৬ জুলাইয়ে (৫ আগস্ট)। জুলাই মাসে এত বড় অভ্যুত্থান হয়েছে, এটা কিন্তু একদিন দুই দিনের ঘটনা না। বিগত ১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে এটা হয়েছে।’
অতীতে ধর্ম ও সংস্কৃতির বিভাজন সৃষ্টির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি কখনও দেখেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেহরি কিংবা বৌদ্ধ পূর্ণিমা নিয়ে উৎসব করেছে, করেনি। এটা কেন করেনি। এটার পেছনে বাংলাদেশকে ভাগ করার খেলাটা রয়েছে। আমাদের বোঝানো হয়েছে, যা কিছু ধর্মীয় তার সঙ্গে সংস্কৃতির কোনও যোগাযোগ নেই। যেটা একেবারে অযৌক্তিক। সংস্কৃতির একটা বড় উপাদান ধর্ম, সেটা যার ধর্ম হোক। এটা সংস্কৃতির উপাদান না, এটা বলার মাধ্যমে একটা বড় অংশের জনগণকে আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আমাদের পাশের দেশে লুকিয়ে আছে। সেখান থেকে তারা নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। মন্দিরে হামলার যে ষড়যন্ত্র তারা করেছিল তা সফল হয়নি, আপনারা সবাই মিলে পাহারা দেওয়ার কারণে। এই চক্রান্ত এখনও তারা চালাচ্ছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, আপনারা একটু সজাগ থাকবেন। তাহলে ওরা এই চক্রান্তে সফল হতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে যে বাউল শিল্পীরা আছেন, তাদের অনুষ্ঠান নিয়ে এক ধরনের লোকজন কিছু প্রপাগান্ডা করার চেষ্টা করছে। আপনারা একটু সজাগ থাকবেন। হিন্দু ভাইদের ওপর হামলার যে কাল্পনিক প্রপাগান্ডা তৈরি করেছিল পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়া, সেটা যেমন আপনারা রুখে দিয়েছেন, আশা করি আপনারা সবাই মিলে এই চক্রান্তও রুখে দেবেন।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন– সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, ঢাকা রিজিওনের টুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান।