কুমিল্লায় গভীর রাতে বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক মো. তৌহিদুল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। নির্যাতনে ওই নেতা মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। নিহতের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক।
তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তিনি একই ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রবিবার তার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।শুক্রবার তার বাবার কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে তার স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তার লাশ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কীভাবে কখন মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না৷ তদন্ত শেষে আমরা বিস্তারিত জানাবো।
আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পুলিশকে বলা হয় তৌহিদুল ইসলামকে নেওয়ার জন্য। যখন পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে হস্তান্তর করা হয়, তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাকে কেন আটক করা হয়েছিল বা কীভাবে তিনি মারা গেছেন, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে কোনও মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানানো হয়নি।
তৌহিদুল ইসলামের ভাই আবুল কালাম বলেন, আমার বাবা চার দিন আগে মারা গেছেন। আমরা শোকে আচ্ছন্ন। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি ও একটি লাল রঙের গাড়ি আমাদের বাড়ি আসে। এসে তৌহিদুল ইসলামের কাছে অস্ত্র আছে এমন অভিযোগে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার ভাই কখনও অস্ত্র আনতে পারে না। তার সম্পর্কে আমাদের পুরো এলাকা খুব ভালো করে জানে। আমরা বারবার বলার পরও তারা নিয়ে যায় আমার ভাইকে। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ আমাদের জানায়, গোমতী বিলাশ নামক স্থান থেকে তার উদ্ধার করেছে পুলিশ। এখন লাশ হাসপাতালে আছে। আমরা কুমিল্লা মেডিক্যাল গিয়ে দেখি তার লাশ। শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন।
তৌহিদুল ইসলামের আরেক ভাই সাদেকুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা বাবার কুলখানির আয়োজন নিয়ে কাজ করছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে আসেন। তাদের সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরা কাউকে দেখেননি, তবে সাদা পোশাকে পাঁচ জন যুবক ছিলেন। বাড়িতে প্রবেশ করেই তারা তৌহিদুলকে আটক করেন। এরপর সবার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেন। ঘরে ব্যাপক তল্লাশি করেন। তবে কিছু পাননি। তৌহিদুলকে আটকের কারণ জিজ্ঞস করলেও তারা কোনও উত্তর দেননি। শুক্রবার সকালে আবারও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে এসে ব্যাপক তল্লাশি করেন। তখনও কিছু পাননি। সকালেও তৌহিদুল তাদের গাড়িতে ছিলেন। কিন্তু গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুলকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে।
তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা, থানায় একটি জিডিও নেই উল্লেখ করে সাদেকুর রহমান জানান, বাড়ির পাশের একটি পরিবারের সঙ্গে তাদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হতে পারে। তৌহিদুলের কাছে অস্ত্র রয়েছে—এমন ভিত্তিহীন তথ্য দেওয়া হতে পারে।
২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৌহিদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে কখনোই কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন।
তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মোরশেদ আলম। তিনি জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে থানার ডিউটি অফিসার জানান যৌথ বাহিনী আদর্শ সদর উপজেলার ঝাঁকুনিপাড়া এলাকায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়কে দ্রুত যাওয়ার জন্য বলেছে। পরে ওসিকে বলে তিনি গাড়ি নিয়ে যান। তখন যৌথ বাহিনী তৌহিদুলকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু তৌহিদুলের অবস্থা খারাপ দেখে তাদেরও সঙ্গে যেতে বললে তারা রাজি হয়নি। পরে তিনি তৌহিদুলকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুলকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
/এএম/