জুলাই আন্দোলনে প্রত্যেকের বুকের মধ্যে আবরার ফাহাদ ছিল: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘জুলাই আন্দোলনে যারা রাস্তায় নেমেছে এই ছেলেদের প্রত্যেকের বুকের মধ্যে আবরার ফাহাদ আছে। আবরার ফাহাদ একটা ইয়াং ছেলে, বুয়েটে পড়ে সে দেশের ন্যায্য হিস্যার কথা লিখেছে। এই লেখার অপরাধে তাকে মেরেছে বাংলাদেশি একটা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন। আবরার কার বিরুদ্ধে লিখেছে? একটা দেশের সরকারের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে লিখেছে। এটার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে আমার দেশের একটা প্রধান রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের। সংক্ষুব্ধ হয়ে তারা আবরারকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর তিন দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রবিবার (২৫ মে) কুমিল্লা নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের আন্দোলনে প্রত্যেকের বুকের মধ্যে আবরার ফাহাদ ছিল। যে কারণে এ বছর আমরা আবরার ফাহাদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছি। আবরার ফাহাদকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা বলতে চাই, আমাদের রাজনীতিটা কী! আমাদের রাজনীতি হচ্ছে– স্বার্বভৌমত্ব ছাড়া বাংলাদেশের নয়, কোনও দেশের স্বাধীনতাই সচল থাকতে পারে না, অচল হয়ে যায়।

‘আমি বিশ্বাস করি, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে এটি অল্প কদিনের সরকার। এরপর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার আসবে। যারাই আসে আর এরকম জায়গায় নেওয়া যাবে না, যখন কোনও একটা দেশ থেকে একজন পররাষ্ট্র সচিব এসে বলবেন, “এই এরশাদ সাহেব তোমাকে নির্বাচনে যেতে হবে। তুমি নির্বাচনে না গেলে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসবে।” অথবা পাশের দেশের একটা বিষয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে আমার দেশের আবরার মারা যাবে, এরকম আর ঘটবে না।’

জানা গেছে, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় তিন দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রবিবার বিকাল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। দ্বিতীয় দিন জেলার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে এবং শেষ দিন মঙ্গলবার (২৭ মে) কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এ আয়োজনে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। মঙ্গলবার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফরহাদ সিদ্দিক। এতে স্মারক বক্তব্য দেন লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

এর আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘নজরুল জয়ন্তী একটা বিশেষ সময়ে এসেছে আমাদের দেশে। ৫ আগস্টের পরে আমরা একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। আপনারা যদি গত জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলনের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন, নজরুল কীরকমভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলেন। দেয়ালের লেখনিতে দেখবেন নজরুলের কবিতা-গান কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এবং এটি শিল্পের শক্তি যে, আজ থেকে ১০০ বছর আগে তিনি কোথায় বসে গান-কবিতা লিখেছেন, তিনি তখনও জানতেন না বাংলাদেশের মানুষ তার গান ও কবিতার অবলম্বন হয়ে উঠবে। তার উপরে অবলম্বন করে তারা একটি বড় গণঅভ্যুত্থান পরিচালনা করবে। শিল্পের শক্তি নজরুলের শক্তি।’

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নজরুলের স্মৃতি অবহেলিত। আমরা স্মৃতি রক্ষা শুরু করি কিন্তু স্মৃতি সংরক্ষণ করি না। এটি আমাদের খারাপ দিক। তবে আমাদের সুনজর রয়েছে।’

নজরুলকে বিশ্বময় করার জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছি। নজরুলের ক্যারেক্টার অনেক বর্ণাঢ্য। এই চরিত্রকে কেউ যদি নির্মোহভাবে চলচ্চিত্রে তুলে ধরেন, এটি পৃথিবীর মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তারা তার দর্শন সম্পর্কে জানতে পারবেন। নজরুল ইনস্টিটিউট আপাতত অনুবাদের কাজ করছে। আমি নিশ্চিত, নজরুল ইনস্টিটিউট একসময় আনবায়াসড বায়োপিক করার চেষ্টা করবে। আনবায়াসড মানে সরকারি প্রোপাগান্ডার মতো না। একটা সত্যিকারের ছবি, যেটা মানুষ দেখতে যাবে। এবং তখনই আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারবো নজরুলকে।’ 

উল্লেখ্য, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ থেকে ১৯২৩ পর্যন্ত কবি কুমিল্লা ও মুরাদনগরে এসেছেন ৫ বার। এ সময় এখানে কবি লিখেছেন বহু গান ও কবিতা। কবির প্রেম, বিরহ, বিয়ে, সংগীত শিল্পী হিসেবে আবির্ভাব হওয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং কারাবরণের মতো ঘটনাবহুল সময় কেটেছে এই কুমিল্লায়।

এর আগে নজরুলের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির ‘চেতনায় নজরুল’ মুর‌্যালে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান উপদেষ্টা ফারুকীসহ অন্যরা। পরে ধারাবাহিকভাবে কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। বিকালে আলোচনা শেষে নজরুলের কবিতা, গান ও বিভিন্ন অবদানের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।