ঈদের ছুটিতে সপরিবারে নানিবাড়ি ঈদ করতে রংপুর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে এসে লাশ হয়ে ফিরলো সাদিয়া আক্তার (১১) আর সাদ্দাম হোসেন (৬) নামে দুই শিশু। দুপুরের তীব্র গরমে নাগর নদীতে নেমেছিল তারা গোসল করতে। হঠাৎ পানির স্রোতে হারিয়ে যায় দুই ভাইবোন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বৃহস্পতিবার সাদিয়ার এবং শুক্রবার দুপুরে ছোট ভাই সাদ্দামের মরদেহ পাওয়া যায়।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার জেলার হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ও আমগাঁও ইউনিয়নের সংযোগস্থল ‘স্লুইসগেট’ এলাকায়।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকারিয়া মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মৃত দুই শিশুর বাবা আমিনুল ইসলাম রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পরশুরাম জলছত্র গ্রামের বাসিন্দা। ছুটি পেয়ে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি হরিপুরের আমগাঁও গ্রামে।
কান্নারত অবস্থায় আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘তীব্র গরমে আমরা সবাই নাগর নদীতে গোসল করতে নামি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি সাদিয়া আর সাদ্দাম স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। চিৎকার করে ওদের ধরতে ছুটলাম, কিন্তু পারলাম না।’
বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন তার শাশুড়ি আছমা বেগম। বলছিলেন, ‘সাদিয়া বলেছিল— নানি, আমি তোমাদের সঙ্গেই থাকবো। কে জানতো এটাই তার শেষ কথা।’
সাদিয়ার মরদেহ পাওয়া গেছে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে নদীর মানিকখাড়ি অংশে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজি চলে। নদীর পাড়ে ছুটে আসেন বহু মানুষ, কেউ নেমে পড়েন পানিতে, কেউ পাথরের ফাঁকে ফাঁকে খুঁজতে থাকেন। বৃহস্পতিবার না পাওয়া গেলেও শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে একই এলাকায় ভেসে ওঠে সাদ্দামের প্রাণহীন দেহ।
স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘স্লুইসগেট এলাকা খুবই বিপজ্জনক। প্রতি বছর এখানে কেউ না কেউ ডুবে যায়। অথচ কোনও সাইনবোর্ড নেই, নেই কোনও নিরাপত্তাব্যবস্থা।’
একই ক্ষোভ জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা মুনির। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি তিন জন গোসল করছে। হঠাৎ চিৎকার শুনে দৌড়ে যাই।’
হরিপুর থানার ওসি বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে রংপুর থেকে ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়। নদীর যে অংশে তারা গোসল করছিল, সেটি ছিল গভীর ও খালের মতো। সম্ভবত সেখানে নেমেই ডুবে যায় দুই ভাই-বোন। গতকাল বিকালে সাদিয়ার এবং আজ দুপুরে সাদ্দামের লাশ খুঁজে পাওয়া গেছে।