চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব কার হাতে যাচ্ছে

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব কার হাতে যাচ্ছে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বর্তমানে এ টার্মিনাল পরিচালনা করছে দেশি অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৬ জুলাই। এরপর এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব কে পাচ্ছে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

এদিকে, এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে জিটুজি ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে এ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি, জামায়াত, বাম রাজনৈতিক দল, বন্দরের শ্রমিক সংগঠন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল এ টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়ার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি, দেশের অর্থায়নে নির্মিত এ টার্মিনাল বিদেশি নয়, দেশি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। এতে জাতীয় স্বার্থ, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান সংরক্ষিত থাকবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘সাইফ পাওয়ার টেকের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষে এনসিটি কারা পরিচালনা করবে তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে আসেনি। সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার বিষয়েও এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।

এদিকে, বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চাইছেন সাইফ পাওয়ার টেকের সঙ্গে চুক্তি নতুন করে নবায়ন না করতে। বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এনসিটি পরিচালনার প্রতি জোর দিচ্ছেন তারা। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার বিষয়।’

গত ১৯ জুন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে বন্দর চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এনসিটি টার্মিনাল বর্তমানে প্রাইভেট অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। যার মেয়াদ গত ৬ জুলাই উত্তীর্ণ হবে। ওই মেয়াদের পরবর্তী সময়ে এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে ১৮ জুন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে টার্মিনালটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সম্পাদনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এতে আরও বলা হয়, ‘টার্মিনাল আপাতত ছয় মাস মেয়াদে পরিচালনার বিষয়ে সভায় বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বর্তমানে স্থিত কী-গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট পরিচালনা এবং আইটি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পরিচালনায় মাসিক ৭ কোটি হিসেবে ছয় মাসে আনুমানিক ৪২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।’

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল রয়েছে– চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। এর মধ্যে এনসিটি সবচেয়ে আধুনিক ও বৃহৎ। দৈর্ঘ্যে ৯৫০ মিটার বিশিষ্ট এই টার্মিনালে একসঙ্গে চারটি বড় কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যায়। রয়েছে বিশ্বমানের গ্যান্ট্রি ক্রেন। বার্ষিক সক্ষমতা ১০ লাখ টিইইউ হলেও ২০২৪ সালে এই টার্মিনালে ১২ লাখ ৮১ হাজার টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

২০০৭ সাল থেকে আংশিক এবং ২০১৫ সাল থেকে পূর্ণমাত্রায় এনসিটি পরিচালনা করে আসছে সাইফ পাওয়ার টেক। একইভাবে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালও (সিসিটি) পরিচালনা করছে সাইফ পাওয়ার টেক। এ ছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) পরিচালনা করছে বন্দর নিজেই এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনা করছে সৌদি আরব ভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটিই)। ২০২৪ সালের জুন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি পিসিটি পরিচালনা করছে। চুক্তি অনুযায়ী নিজস্ব সরঞ্জাম দিয়ে ২২ বছর পিসিটি পরিচালনা করবে সৌদি আরবের কোম্পনিটি।

চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থ শিপ হ্যান্ডলিং ও টার্মিনাল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, ‘এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিলেও তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হবে। সময় শেষে টার্মিনালটিকে বন্দরের হাতে হস্তান্তর করার কথা। তখন বন্দরকেই টার্মিনাল পরিচালনা করতে হবে। তাই স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ টার্মিনাল বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি পরিচালনা করে, তাহলে নতুন একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করবে বলে আমি মনে করি।’

সাইফ পাওয়ার টেকের কর্মকর্তা সাইফুল আলম বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সাইফ পাওয়ার টেকের চুক্তির মেয়াদ আগামী ৬ জুন থেকে শেষ হচ্ছে। এরপর চুক্তির মেয়াদ নতুন করে বৃদ্ধি করা হবে কিনা এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ তিনি এ বিষয়ে জানতে সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তরফদার মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। তরফদার মো. রুহুল আমিনের ফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।