ক্ষত শুকায়নি সিডরের, নিখোঁজদের অপেক্ষায় স্বজনরা

সিডর

আজ ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যায় ‘সুপার সাইক্লোন’ সিডর। সিডর আঘাত হানার পর ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সেই দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে পারনি দুর্গত এলাকার মানুষ। সিডরের কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে ওঠেন তারা।

সিডরের সময় ভোলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চরচন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের নিখোঁজ হন ১৫ জেলে। তাদের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা। অনেকে আবার সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না কেউ।

ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কূলগাজী গ্রামের সহিজল মাঝি সিডরে আঘাত হানার সময় মাছ ধরতে গিয়ে ছিলেন সাগরে। তিন মেয়ে তিন ছেলে, মা-বাবা আর স্ত্রী রেখে সেই যে গেলেন আর ফিরে এলেন না। আসবেন কিনা তাও জানে না তার পরিবার। এখনও তার ফিরে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন সহিজলের স্ত্রী। স্বামীর কথা বলতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

একই গ্রামের কাদির গাছালির মেয়ে জামাই মিলন মাঝিও মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারালেন। তার স্ত্রী-সন্তানরা সবাই এখন ছন্নছাড়া। সিডরে কেউ বাবা-মা, কেউ সন্তান, কেউবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে কোনও রকমে বেঁচে আছেন। ভোলা সদরের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামে এখনও চলছে শোকের মাতম। সন্তান হারানো ব্যথা ভুলতে পারছেন না তারা।

ভয়ঙ্কর সিডরের আঘাতে ভোলার জেলা সদরসহ চরফ্যাশন, মনপুরা ও বোরহানউদ্দিনে ৫২ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এছাড়া কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। নিহত হয় ৪২ জন।

নিঃস্ব অনেক পরিবার গৃহ নির্মাণ করতে না পেরে বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছে। ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি ওই এলাকার লোকজনে। ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি তাদের তাড়া করে ফিরছে। যারা বেঁচে আছেন তারা জানেন তাদের ভবিষ্যত কী।

ভোলা সিপিপির উপপরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন জানান, ভোলা জেলা এখনও দুর্যোগে ঝুঁকিমুক্ত নয়। ভোলায় এখনও দুই শত সাইক্লোন শেল্টার ও মাটির কিল্লা নির্মাণ প্রয়োজন।

 

/এসটি/