২১ জন মুক্তিযোদ্ধার হাতেই মুক্ত হয় বরগুনা

Barguna 3 december Pic 2017 (1)

আজ ৩ ডিসেম্বর বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মাত্র ২১ জন মুক্তিযোদ্ধার হাত ধরেই মুক্ত হয় বরগুনাবাসী। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে বরগুনার মুক্তিকামী সহস্রাধিক তরুণ বাঁশের লাঠি, গুটি কয়েক রাইফেল, বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে। এরই মধ্যে পাকবাহিনী দুর্বল প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে।

মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের অধীনের বরগুনাকে মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৩ ডিসেম্বরকে বেছে নেন। তারা পরিকল্পিতভাবেই বরগুনাকে মাত্র ২১জন মুক্তিযোদ্ধা দখল মুক্ত করেন পাকবাহিনীর হাত থেকে।

ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ ও ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা ছেড়ে চলে যান। কেননা পাক বাহিনীর মোকাবেলা করার মতো তাদের কোন অস্ত্র ছিলনা। এদিকে পাক বাহিনী ১৪মে বরগুনা এসে বিনা বাধায় বরগুনা শহর দখলের পর পাথরঘাটায় বিষখালী নদীতীরে গণহত্যা চালায়। তারপর অন্য থানা গুলো দখল করে পটুয়াখালী চলে যায়।

২৬ মে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন শাফায়াতের নেতৃত্বে ৪ পাক সেনা  বরগুনা আসে এবং ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাদেরকে জেলা কারাগারের দক্ষিণ পাশে গণকবর দেয়া হয়।

সময়ের ব্যবধানে কয়েক মাসের মধ্যেই বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা শক্তি অর্জন করে মনোবল নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। বরগুনার, বামনা, বদনীখালী ও আমতলীতে যুদ্ধের পরে পাকবাহিনীর সদস্যরা বরগুনা ট্রেজারি ও গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলোয় অবস্থান নেয়।

মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের অধীন। মুক্তিযোদ্ধা হেড কোয়ার্টারের নির্দেশ পেয়ে বুকাবুনিয়া সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ এর ২ ডিসেম্বর বরগুনা বেতাগী থানার বদনীখালী বাজারে আসেন। রাত তিনটার দিকে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জেলে নৌকা যোগে বরগুনার খাকদোন নদীর পোটকাখালী স্থানে অবস্থান নেন। তাদের একজন মুক্তিযোদ্ধার সংকেত পেয়ে ভোর রাতে তারা কিনারে উঠে আসেন। তারা দলে ছিলেন মাত্র ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা। যাদের মধ্যে ১০ জন বরগুনার ও বাকী ১১ জন ছিলেন ঝালকাঠির।

কারাগার, ওয়াবদা কলনী, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারলেস ষ্টেশন, এসডিওর বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি উপ-বিভাগে ভাগ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা যে যার অস্ত্র নিয়ে অবস্থান অনুযায়ী শীতের সকালে ফজরের আজানকে যুদ্ধ শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেন। আযান শুরুর সাথে সাথে ৬টি স্থান থেকে একযোগে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় দফা গুলি করে তারা জেলখানার দিকে এগোতে থাকেন। চারজন সহযোগিসহ সত্তার খান ছিলেন, কারাগার এলাকায়। তারা এসময় জেলখানায় অবস্থানরত পাকিস্থানপন্থী পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পন করিয়ে এসডিও অফিসের সামনে নিয়ে আসেন।

কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনকে আত্মসমর্পন করান। দুপুর বারোটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনিক দায়িত্ব এসডিওকে সাময়িকভাবে বুঝিয়ে দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বুকাবুনিয়া সাব-সেন্টারে চলে যান। বরগুনা হয় হানাদার মুক্ত। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ে ৩ ডিসেম্বর।

বরগুনায় হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বরগুনায় শিশুকিশোর সংগঠন সাগরপাড়ি খেলাঘর প্রতিবছর গনকবরে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলের মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করেন।