নারীবান্ধব নগরীর প্রত্যাশা বরিশালের নারী নেত্রীদের

বরিশাল সিটি করপোরেশনবরিশাল নগরীর প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী হলেও, নগরীতে চলাফেরাসহ অপরাপর সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তারা নানাভাবে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। তাই বরিশাল নগরীকে নারীবান্ধব নগরী বলে মনে করেন না স্থানীয় নারী নেত্রীরা। তাদের দাবি, আসন্ন নির্বাচনে জয়ী মেয়র বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী হিসেবে গতে তুলবেন।

নারী নেত্রীরা বলেন, বাস্তবসম্মত কোনও কার্যক্রম না থাকলেও বরিশালকে শিশুবান্ধব নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ নারীবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে এখনও পর্যন্ত কোনও মেয়র উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। আমাদের দাবি, নগরীতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ, নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য বিলুপ্ত, মাদার্স কর্নার প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগের মধ্যদিয়ে নগরীকে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হোক।

জানা যায়, বরিশাল সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ পুরুষ ভোটার মাত্র ৭০৬ জন বেশি। পুরুষ ভোটারদের সিংহভাগই ভোটের সময়ে কর্মস্থলে থাকায় বরিশালে ভোট দিতে পারেন না।

নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করা উন্নয়ন কর্মী শাকিলা ইসলাম বলেন, ‘ভোটের পরিসংখ্যানে বরিশাল নগরীতে জয়-পরাজয়ের অন্যতম ফ্যাক্টর নারী ভোট। অথচ বিগত তিনটি সিটি নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়ররা বরিশালকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার কোনও সদিচ্ছা প্রমাণ করতে পারেননি। এমনকি বিসিসির বার্ষিক বাজেটেও এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। ফলে এখনও নগরীতে চলাফেরায়, কর্মস্থলে এবং সমান অধিকার প্রাপ্তিতে নারীদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

মহিলা পরিষদ সম্পাদিক নারী নেত্রী প্রতিমা সরকার বলেন, ‘বরিশাল নগরীতে নারী ভোটার অর্ধেক হলেও তাদেরই অধিকার ও সুবিধাবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। শ্রমজীবী নারীরা মজুরি বৈষম্যের শিকার। নগর কর্তৃপক্ষের উচিত শ্রমজীবী নারীদের অধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা। কর্মজীবী মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের কোথায় রেখে কর্মস্থলে যাবেন তার কোনও সুব্যবস্থা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের জন্য নগর কর্তৃপক্ষের এ অধিকারগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব হলেও কেউ সে দায়িত্ব পালন করেননি। ’

সরকারি বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ‘নগরীতে স্বাচ্ছন্দ্যে নারীদের চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। অথচ নারীদের ভোট নিয়ে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরা এসব বিষয়ে কখনও মাথা ঘামান না। এখনও একজন নারী সহজে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে পারেন না।’

বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ারের নির্বাচন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, ‘বিএনপি সবক্ষেত্রে নারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে তাদের প্রার্থী বিজয়ী হলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শিরিনের এ বক্তব্যকে মিথ্যাচার আখ্যা দিয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতারা বরাবরই নারীদের সমান সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে বিরোধীতা করে আসছেন। তাদের সমর্থিত তেঁতুল মৌলভীরা নানা আপত্তিকর বয়ান দিয়ে নারীদের চুড়ি পরিয়ে ঘরের দাসি করে রাখতে চেয়েছিলেন।’ মেরী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। সবক্ষেত্রে আওয়ামী লীগই নারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্যই নারীরা আজ সবক্ষেত্রে সমান অধিকার পাচ্ছেন। আসন্ন সিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নির্বাচিত করা হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’
একমাত্র মহিলা মেয়র প্রার্থী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘শুধু নারী-পুরুষ নয়, তারা সব মানুষের ন্যায্য ও সমাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন। নিজে নারী হওয়ার কারণে নারীদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে পারা আমার পক্ষে আরও সহজ হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’