বিসিসি নির্বাচনে সরোয়ারের জামানত হারানো নিয়ে বিএনপি নেতারা যা বললেন

 মজিবর রহমান সরওয়ারবরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনকে সরকারের ‘প্রহসনমূলক’ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। এ কারণেই বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার জামানত হারিয়েছেন উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘এটা ছিল সরকারের নীলনকশার নির্বাচন। ব্যাপক ভোট কারচুপি, অবিশ্বাস্য জালভোট ও সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনীর মারমুখী তৎপরতার জন্য নির্বাচনে এমন ফল হয়েছে।’ এই নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে বলেও তারা মনে করছেন।

বরিশাল জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এবায়দুল হক চান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কতটা অসহায় ছিলাম তা নির্বাচনের দিন অনুভব করেছি। আমি বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট অথচ আমাকেও কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। অনেক অনুরোধের পর একটি কেন্দ্রে ঢুকেই সামনে ভোট কাটতে দেখেছি। প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে বলেও কোনও ফল পাইনি। তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তিনি সেটি নিতে চাননি। এ সময় নির্বাচন কমিশনের এক পরিদর্শকে সামনে পেয়ে তাকেও বিষয়টি বলেছি। তিনিও ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ না বলে চলে গেছেন। ১৫নং ভোটকেন্দ্রের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন ম্যাজিট্রেটকে অভিযোগ করলেও তিনি কোনও কথা না শুনেই চলে যান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির কোনও নির্বাচনি এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যদিও সেদিন সকালে কিছু লোক পালিয়ে ঢুকেছিল তাদেরও মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন দিয়ে সরকার দলীয় ও বহিরাগত ক্যাডারদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বিএনপির কর্মীরা ভোট ডাকাতির কথা বিজিবি ও র‌্যাবের কাছে জানালে তারা বলেছে আমাদের দায়িত্ব রাস্তায়।

এবায়দুল হক চান বলেন, ‘বরিশালে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে একটুও দুর্বল নয়। কিন্তু মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারেনি। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।

নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বরিশালবাসী একটি নজিরবিহীন কারচুপি ও অবিশ্বাস্য জাল ভোটের নির্বাচন উপভোগ করছে। এ কারণে একমাত্র আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া সব মেয়র প্রার্থী দুপুরের আগেই ভোট বর্জন করেছেন।’

বিএনপির সাংগঠনিক শক্ত অবস্থানের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বরিশাল সিটিতে বিএনপির কর্মীই আছে ১৫ হাজার। তাদের বাড়িতেও ভোট আছে। সেখানে চারবারের সংসদ সদস্য ও একবারের সফল মেয়র মাত্র ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট পাবেন এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না।

বরিশাল মহানগ বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘কোনও প্রচারণা চালাতে দেয়নি। নেতাকর্মীদের আটক করেছে। আগের রাতে নৌকায় সিল মেরে রেখেছে। পরের দিন সকালেও আওয়ামী লীগের কর্মীরা নৌকায় সিল দিয়েছে। এ কারণে সকাল ১০টার দিকে আমি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করি। নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোট বন্ধের আবেদন জানাই। যেখানে ভোট বর্জন করেছি, সেখানে ফলাফল জানার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’

অবশ্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই বলে আসছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দেখে জনগণ এতবেশি ভোটের ব্যবধানে তাকে বিজয়ী করেছেন।’

সোমবার (৩০) জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩০০ জন ভোটার। নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি কেন্দ্রের বেসরকারিভাবে পাওয়া ফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট। ফলে জামানত হারাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীসহ নির্বাচনের ছয় মেয়র প্রার্থী।