শনিবার (২০ জুলাই) রাতে বরগুনার সদর রোডের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ব্যক্তিগত ল’ চেম্বারের পেছনের একটি কক্ষে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামকে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে বরগুনা বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টুও ছিলেন।
এর একদিন আগে গত শুক্রবার মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর গণমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এ সবকিছুই শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেভ করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেওয়া হচ্ছে।’
তবে শনিবার রাতে সংসদ সদস্যের বরগুনার সদর রোডের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তার সাক্ষাতের জন্য এ প্রতিবেদক অপেক্ষমাণ থাকাকালে ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলামকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। কক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্যের পুত্র সুনাম দেবনাথ ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুর। তারা কক্ষের ভেতরে প্রবেশের পর ভেতর থেকে সুনাম একবার কক্ষের দরজা আটকে দেন।
এ সময় কক্ষের বাইরে নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরিফও অপেক্ষমাণ ছিলেন। পরে ৯টা ৫৩ মিনিটের দিকে সুনাম দেবনাথ কক্ষ থেকে বের হয়ে দুলাল শরিফের সঙ্গে কানেকানে কথা বলেন। এরপর দুলাল শরিফ চেম্বার থেকে দ্রুত বের হয়ে যান।
সংসদ সদস্যের কার্যালয় ত্যাগ করার সময় তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এরপর তাদের ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্যের কাছে আসতেই পারে। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।’
সংসদ সদস্য কি তাদের ডেকেছিলেন, নাকি তারা ইচ্ছা করেই সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি বারের সভাপতিকে ফোন দিয়েছিলেন, তিনি আমাকে জানানোর পর আমি সভাপতির সঙ্গে এসেছি।’
এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে আর কিছু বাকি আছে?’ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মিন্নির আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট আসলাম সংসদ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই পারেন না।’ এ বিষয়ে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মিন্নির আইনজীবী কেন দেখা করতে এসেছিলেন, জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘তারা চা খেতে এসেছিলেন।’
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তখন তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের থামানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার এজাহারে উল্লেখ থাকা আট আসামিসহ সন্দেহভাজন আরও সাত জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।