পর্যটকশূন্য কুয়াকাটায় এখন শুধুই ঢেউয়ের গর্জন

প্রতিবছর ঈদের সময় হাজার হাজার পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হতো এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ১ এপ্রিল কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী। এতে ঈদ মৌসুমে পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে এখন শুধু সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন। সৈকতের জিরো পয়েন্টের পূর্ব-পশ্চিমে বালিয়ার উপরে লাল কাঁকড়া ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না।

পর্যটক না থাকায় হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ রয়েছে। নীরব চারপাশ, সৈকতে নেই কোনও পর্যটক’র আনাগোনা। অথচ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটায় প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে থাকতো পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। করোনাভাইরাস’র দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এ বছর ঈদ মৌসুমে কুয়াকাটার চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। চিরচেনা কুয়াকাটা এখন যেন স্থানীয়দের কাছেই অচেনা লাগছে।

পর্যটকশূন্য থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হোটেল, রেস্তোরাঁ, টুরিস্ট বোট, ওয়াটার বাসসহ সংশ্লিষ্টরা। আয় রোজকার না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটাই অসহায় তারা।

স্থানীয় ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা জানায়, ৩১ মার্চ বিকেলে টুরিস্ট পুলিশ সৈকতে মাইকিং করার পর আমাদের সব ধরনের ট্যুরিজম কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। আমাদের ভ্রমণতরীগুলো এখনও ঘাটে বাঁধা রয়েছে।

কুয়াকাটা ইলিশ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানায়, প্রশাসনের নির্দেশনার পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টের কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

হোটেল মালিক মোতালেব শরীফ জানায়, লোনের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা আগাচ্ছি। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারের সাহায্য প্রয়োজন।

এদিকে, সমুদ্র সৈকতে জনসমাগম ঠেকাতে এবং সরকারের নির্দেশনা মানতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মদ আলী (কালাপাড়া সার্কেল) বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সমুদ্র সৈকতসহ পুরো পর্যটন এলাকা পর্যটক ও দর্শনার্থীশূন্য রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। সব ধরনের হোটেল বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে কুয়াকাটায় কোনও পর্যটক নেই। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অন্য জেলা থেকে কোন পর্যটক আসলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সরকারি নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত হোটেলে বুকিং না রাখার জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

কুয়াকাটায় কর্মহীন হয়ে পড়া লোকদের জন্য কোন ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা কোন না কোন ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সরকারি নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল থেকে প্রশাসন ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটাকে লকডাউন ঘোষণা করে। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে ৪ শতাধিক হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আর কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এর সঙ্গে যুক্ত থাকা ৫ হাজার শ্রমিক-মালিক।