করোনা রোগীর সেবা দিতে সক্ষম শুভর রোবট, দেবে অক্সিজেনও

হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে সক্ষম এমন একটি রোবট আবিষ্কার করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামে কলেজছাত্র শুভ কর্মকার।

এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেবক’। সোমবার (৭ জুন) সকালে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিতে রোবটটি আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাশেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুনসহ অন্যান্যরা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিস কক্ষ থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে রোবটটি রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করে। ডাক্তার যত দূরেই থাকুক না কেন নির্দেশনা মেনে রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সক্ষম এই রোবট।

শুভ কর্মকার জানান, রোবট ‘সেবক’ চিকিৎসা সেবায় দেওয়ার পাশাপাশি রোগীর অক্সিজেন সিচুরেশন কমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদন করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সরবরাহ করতে পারবে। একই সঙ্গে ওষুধ আনা-নেওয়া, অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেওয়া, রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ সরবরাহ করা, সংক্রমিত রোগীর বর্জ্য তার শরীরে থাকা ইউভি (আল্ট্রা-ভায়োলেট) রশ্মির মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করতে পারবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, সারাবিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করছে। এমনভাবে একটি রোবট তৈরি করা হলে সে প্রকৃতপক্ষেই ডাক্তার এবং রোগীর মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে কাজ করতে পারবে। ‘সেবক’ সরাসরি রোগীর কাছে যেতে পারবে। তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে রোগীকে সঙ্গ দিতে পারবে। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক রোগীর সর্বশেষ অবস্থা সরাসরি দেখতে পারবে এবং রোগীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন চিকিৎসকরা। এতে করে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবেন তারা।

আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুভ আবিষ্কৃত রোবট

ইউএনও বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ভিডিও কলে ডাক্তার এবং রোগী কথা বলতে পারেন। কিন্তু করোনা সংক্রমিত রোগীর কাছে কেউ যেতে চান না। এ ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে রোবট ‘সেবক’। রোবটটি বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা হলে করোনা মোকাবিলা সহজ হবে। এতে রোগী তার প্রয়োজনীয় সেবা পাবেন, আবার চিকিৎসকও নিরাপদ দূরত্বে থেকে চিকিৎসা দিতে পারবেন।

আবুল হাশেম বলেন, শুভ কর্মকারের রোবটটিকে আরও আধুনিকভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

শুভ কর্মকার বলেন, রোবটিক্স আমার প্রিয় বিষয়। তাই ভবিষ্যতে আমি শুধু রোবট নিয়েই কাজ করতে চাই।

‘সেবক’ শুভ কর্মকারের দ্বিতীয় উদ্ভাবন। এর আগে ২০১৮ সালে জগদ্বিখ্যাত রোবট সোফিয়া যখন বাংলাদেশে আসে সেটি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে শুভ কর্মকার উদ্ভাবন করেন রোবট ‘রবিন’। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবে নাগরিকত্ব পাওয়া রোবট সোফিয়া শুধু ইংরেজিতে কথা বলতে পারলেও ওই সময়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভ কর্মকার উদ্ভাবিত ‘রবিন’ বাংলায় কথা বলতে পারতো। এমনকি প্রশ্নোত্তরেও অংশ নিতে পারতো।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শুভ কর্মকার। বাবার নাম সন্তোষ কর্মকার। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় শুভ গৈলা ভেগাই হালদার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় শহরের অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ে। ভর্তির পর করোনায় বন্ধ থাকায় একদিনও শ্রেণি কক্ষে যেতে পারেননি। সেই সুবাদে রোবট নিয়ে কাজ করার বিস্তর সুযোগ হয়েছে তার।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৫ মে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের উদ্ভাবন বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় হয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করেন ‘রবিন’ উদ্ভাবক শুভ কর্মকার। ২০১৯ সালের ২৭ জুন ৪০তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাত থেকে পুরস্কার নেন।

এছাড়াও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০১৯ এ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাত থেকে ‘বছরের সেরা মেধাবী’ পুরস্কার পান। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় রোবট উদ্ভাবন করলেন এই তিনি।