শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় গতি আনা চ্যালেঞ্জ

প্রায় দেড় বছর পর বরিশালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। তবে স্বাভাবিক দিনগুলোর মতো কোলাহল ছিল না। স্বাস্থ্যবিধি মানতে উন্মুখ ছিল শিক্ষার্থীরা, একইভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে গেটে নির্দেশনা দেন শিক্ষকরা। তবে করোনায় ঘরবন্দি শিক্ষার্থীদের কমেছে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ।

দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং প্রাণচাঞ্চল্য কমেছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রথম দিন ভালোভাবেই কেটেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধানরা। এখন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় গতি আনা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা।

বরিশাল জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এবং সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি বরিশাল কলেজসহ বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রথম দিন কোনও ধরনের কোলাহল ছাড়াই শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেছে। রবিবার ক্লাস হয়েছে এসএসসি এবং ৫ম শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের। অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন।

বরিশাল জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক ফাহমিদা বেগম বলেন, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ঘরে বন্দি থাকায় তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ কম হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের ঘাটতি দেখা গেছে। তবে পড়াশোনায় তাদের আগ্রহ আছে। শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়ার সময় বিষয়গুলো চোখে পড়েছে। আগে রুটিনমতো বিষয়গুলো তাদের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। শ্রেণিকক্ষের পড়া তৈরি করে বাসা থেকে নিয়ে আসতো। আমরা চাই, ওই গাঁথুনিটা তাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে। তাদের মাঝে কোনও ধরনের পরিবর্তন এলে তা কাটিয়ে উঠতে হবে।

বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা থাকায় শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি পারেনি, এ জন্য প্রাণচাঞ্চল্য ছিল না। কিছুদিন ক্লাস করার পর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য পূর্বে লেখাপড়ার যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা। এ জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি নজর থাকবে আমাদের। তাদেরও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের কলেজ গেট থেকে ঢুকতে দেখে চোখে পানি এসে যায়। অনেক শিক্ষার্থী গেটেই পায়ে সালাম দিয়েছে। এ অভিব্যক্তি আসলে বোঝানো যাবে না। আমরা আনন্দিত। সঙ্গে সঙ্গে আনন্দিত শিক্ষার্থীরাও। এখন আমাদের জরুরি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় গতি আনা। এ জন্য আমি শিক্ষকদের নিয়ে সভা করে শিক্ষার্থীদের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ওসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেবো। আমি চাচ্ছি, শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক দিনগুলোতে যেভাবে লেখাপড়া করে ভালো ফল করেছে, সে ধারায় ফিরে আসুক।

বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক দিনগুলোর মতো কোলাহল ছিল না

হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম ফখরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা আসায় তাদের চেয়ে আমি বেশি খুশি হয়েছি। বিদ্যালয়ের গেট থেকে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের শারীরিক অবস্থা এবং পরিবারের সদস্যদের খবর নিয়েছি। ক্লাস শুরুর আগে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে লেখাপড়ায় সমস্যা থাকলে শিক্ষকদের জানাতে বলেছি। কোনোভাবেই লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকা চলবে না বলে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিয়েছি। এ জন্য যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন দেবো।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের জেলা সভাপতি ও বরিশাল সদর উপজেলার মাখরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম জাফর বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশের সময় শারীরিক ভাষা বলছিল তারা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হয়ে এসেছে। প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে সব শিক্ষক তাদের স্বাগত জানান। তাদের খোঁজখবর নেন। দেড় বছর পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা আমাদের। এটা যে কত আনন্দের তা বলে বোঝাতে পারবো না। এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় গতি ফিরিয়ে আনা। তাদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনা।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল এবং জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে খুশি হন তারা। এ ধারা অব্যাহত রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।