কলেজছাত্রকে অপহরণ করে বিয়ে, তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা

পটুয়াখালীতে মো. নাজমুল আকন (২৩) নামের এক কলেজছাত্রকে অপহরণ করে অন্যত্র নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে মোসা. ইশরাত জাহান পাখি (২৫) নামের এক তরুণীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর নাজমুল বাদী হয়ে ওই তরুণীকে প্রধান আসামি করে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় আরও ৬/৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

নাজমুল পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের জালাল আকনের ছেলে। সে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র। অভিযুক্ত ইশরাত জাহান পাখি একই উপজেলার গাজিপুর এলাকার মো. আউয়ালের মেয়ে।

জোরপূর্বক বিয়ে করার ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে ইশরাতের বাম পাশে নাজমুল বসে আছেন। পেছন থেকে ভুক্তভোগীকে দুই দিক থেকে একজন ধরে রেখেছেন। সেখানে আরও কয়েকজনের কথা শোনা যায়। এ সময় ওই তরুণীকে নীল কাগজে স্বাক্ষর করতে দেখা গেছে। স্বাক্ষর গ্রহণের পর প্রথমে ইশরাতকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়। পরে নাজমুলকে মিষ্টি খাইয়ে দিলে সে মুখ থেকে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় পটুয়াখালীতে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

নাজমুলের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, তার মক্কেল নাজমুল পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের নিয়মিত ছাত্র এবং সে কলেজের হোস্টেলে থাকেন। আসামি ইশরাত দীর্ঘদিন ধরে নাজমুলকে মোবাইল ফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাবসহ বিয়ের প্রলোভন দেখায়। কিন্তু সে রাজি না হলে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নাজমুলকে ৪/৫ জন লোক চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ৭/৮ জন বলপূর্বক তাকে একটি নীল কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। পরে ওই দিনই তাকে শহরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কাগজের স্বাক্ষর নিয়ে তারা একটি কাবিননামা তৈরির পাঁয়তারা করছেন। এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ১৪৩/৩৬৫/৩৭৯/৩৮৪/৫০৬ ধারা মোতাবেক আদালতে মামলা করা হয়েছে। বিচারক (আমিরুল ইসলাম) মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। ভাইরাল ভিডিওটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

চেষ্টা করেও এ বিষয়ে নাজমুলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নাজমুলকে ২৭ সেপ্টেম্বর অপহরণের পরে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। রাজি না হওয়ায় তারা অনেক নির্যাতন করে, এক পর্যায়ে পর দিন ইশরাত জাহান পাখির সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয়। নাজমুল বাদী হয়ে মামলা করার পর থেকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে নাজমুল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

অভিযুক্ত ইশরাতের অভিযোগ, ‘নাজমুলের সঙ্গে দীর্ঘ দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে (নাজমুল) নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে এসেছে। এখানে অপহরণ কিংবা জোরপূর্বক বিয়ের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ কারণে বর্তমানে আমি নাজমুলের বাড়িতেই আছি।’

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, আদালতের নির্দেশে মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।