ডেকের মেঝে গরমের কথা জানালে কম্বল বিছিয়ে দেয় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ

ঢাকার সদরঘাট থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযান-১০ লঞ্চটি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই ডেকের মেঝেতে গরম অনুভব করেছিলেন বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। তবে এ বিষয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জানালেও তোয়াক্কা করেনি তারা। উল্টো গরমের তাপ থেকে বাঁচতে ডেকের মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে দিয়ে যায়।

লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা সাদিক শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে জানান, লঞ্চটি ঢাকা থেকে ছাড়ার পরপরই ডেকের ফ্লোর গরম হতে থাকে। এ সময় লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি যাত্রীরা জানালেও তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিবৃত করতে কম্বল বিছিয়ে দিয়েছিল ফ্লোরে। এরপর ক্রমান্বয়ে গরম হতে থাকলেও শীতের তীব্রতার কারণে তা টের পাননি যাত্রীরা। তবে শুরুতেই যখন লঞ্চটি গরম হচ্ছিল তখন ব্যবস্থা নিলে হয়তো এতো প্রাণহানি দেখতে হতো না বলে দাবি করেন এ যাত্রী।

আরেক যাত্রী মোশারফ বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বরগুনা যাচ্ছিলাম। লঞ্চে দেরিতে আসার কারণে কেবিন না পাওয়ায় নিচ তলার ডেকে অবস্থান নিয়েছিলাম। লঞ্চ যখন গরম হতে শুরু করে, তখন সেখান থেকে সরে লঞ্চের সম্মুখভাগে যাই। এরপর মাঝখানে একবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মানুষের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। আগুন লাগার কথা শোনার পরই লাফিয়ে নদীতে পড়ে তীরে উঠি। এরপর স্থানীয়দের মাধ্যমে স্বজনদের খবর দিলে তারা গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে।’

এদিকে, ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা যাত্রীদের অভিযোগ, অভিযান-১০ লঞ্চটি ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। লঞ্চে ছিল না অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা। অগ্নিনির্বাপণের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলো ছিল বিকল।

তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে জানানো হয়েছে, ৩১০ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিল লঞ্চটি। যাত্রীরা বলছেন, প্রায় এক হাজারের মতো যাত্রী ছিল লঞ্চে। এদিকে, লঞ্চটি ৯০০ যাত্রী বহনে সক্ষম।

এ বিষয়ে জানতে লঞ্চ মালিক হাম জালালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সদরঘাট থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে লঞ্চটি। এরপর থামে চাঁদপুর, বরিশাল ও দপদপিয়া ঘাটে। তিন ঘাটেই যাত্রীরা ওঠানামা করেছেন। দপদপিয়া থেকে লঞ্চটি ছাড়ে বেতাগীর উদ্দেশে। এর মাঝেই বাধে বিপত্তি। রাত ৩টায় সুগন্ধা নদীতে চলমান লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষে আগুনের সূত্রপাত। পানিতে ভাসমান এই যানে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান। প্রাণে বাঁচতে যাত্রীরা ঝাঁপ দিতে থাকেন সুগন্ধা নদীতে। এতে অনেকে প্রাণে বাঁচলেও এখন পর্যন্ত ৪০টি লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।