১০ হাজার তরমুজ গাছ উপড়ে ফেলার প্রমাণ পেয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা

কয়েক বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালে সবজি চাষ করে আসছেন দেলোয়ার হোসেন। এ জন্য বনবিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েছিলেন। দুই মাস আগে সেখানে তরমুজের চাষ শুরু করেন। 

গত রবিবার হঠাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধ রক্ষা প্রকল্পের প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম এসে প্রায় ১০ হাজার গাছ উপড়ে ফেলেন। অনেক কান্নাকাটি করেন দেলোয়ার। এমনকি মনিরুল ইসলামের হাত-পা ধরেছিলেন, কিন্তু তিনি শোনেননি।

তরমুজ গাছ উপড়ে ফেলায় প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে দেলোয়ারের। ঘটনার পর থেকে কান্না থামছে না এই অসহায় কৃষকের।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শনে যান কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক ও ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআরএম সাইফুল্লা। পরিদর্শন শেষে ঘটনার সত্যতা পান। আগামী তিন দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: তুলে ফেলা হলো ১০ হাজার তরমুজ গাছ  

এমআরএম সাইফুল্লাহ বলেন, তরমুজ গাছ উপড়ে ফেলার সত্যতা পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর উচিত ছিল কৃষক দেলোয়ারকে এক মাস সময় দেওয়া। এক মাসের মধ্যেই তরমুজ উঠে যেতো। তারপরে তাদের কাজ করতে পারতেন। 

দেলোয়ারের কান্না থামছেই না

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি তরমুজ চাষে বেড়িবাঁধের কোনও ক্ষতি হতো না। বৃষ্টি পেলে ঘাস ও আকাশমণি গাছগুলো আরও ভালো হতো। তরমুজের জন্য বেড়া দেওয়ায় বেড়িবাঁধের ঢালে রোপণ করা গাছগুলো আরও নিরাপদে ছিলো। আর কৃষকের উচিত ছিল চাষ করার আগে অনুমতি নেওয়া।’

কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুই মাস আগে রাস্তার ঢালে তরমুজের চাষ শুরু করি। আমার মা, স্ত্রী ও ছেলে সবাই এই ক্ষেতে শ্রম দিতাম। কিছুদিন আগে মানুষের কাছ থেকে ধার করে টাকা এনে সার কিনে দিয়েছি। এতে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপর আমার আর তেমন খরচ হইতো না। শুধু মাঝে মাঝে ওষুধ আর পানি দিতে হতো। সবকিছু ঠিক থাকলে আট থেকে দশ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতাম।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘রবিবার মনিরুল স্যার আমার সব শেষ করে দিয়ে গেছেন। আমি এখন কীভাবে ঋণের টাকা দেবো, কীভাবে চলবে আমার সংসার? মরণ ছাড়া আর কোনও পথ নেই।’ 

দুই মাস আগে ঋণ নিয়ে তরমুজের চাষ শুরু করেন দেলোয়ার

গাছ উপড়ে ফেলার বিষয়ে প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, দেলোয়ার তরমুজ গাছ লাগিয়েছে আগে দেখিনি। আমাদের বেড়িবাঁধ রক্ষায় লাগানো ঘাস কেটে উঠিয়ে ফেলায় কিছু জায়গা রেখে বাকি তরমুজ গাছগুলো উঠিয়ে ফেলেছি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় যে ঘটনাটি উঠে এসেছে যদি এর সত্যতা পাওয়া যায়, জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ওই কৃষক কোনও ক্ষতিপূরণ বা সহায়তা পাবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।