লঞ্চে উঠতে ভরসা ট্রলার

বরিশাল নগরীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হক নাসিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেহেন্দীগঞ্জ লঞ্চঘাট নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, তার সন্তানরা দাদার বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছে। কিন্তু সেখানে যেতে হলে বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে যেতে হবে। এতে লঞ্চে উঠতে একরকম যুদ্ধ করতে হয়। বরিশাল থেকে মেহেন্দীগঞ্জ লঞ্চঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত লঞ্চ যেতে পারে না চরের কারণে। মাঝ নদীতে নোঙর করার পর ট্রলারযোগে গিয়ে লঞ্চে উঠতে হয়।
 
আবার মেহেন্দীগঞ্জ থেকে বরিশালে ফিরতে একইভাবে ট্রলারযোগে মাঝ নদীতে নোঙর করা লঞ্চে উঠতে হয়। এতে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে সবচেয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন যারা অসুস্থ এবং বৃদ্ধ তারা। এই দুর্ভোগ নিরসনের জন্য মেহেন্দীগঞ্জের দায়িত্বশীল ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন এনামুল হক।

মেহেন্দীগঞ্জের বাসিন্দা সঞ্জয় গুহ বলেন, শীত মৌসুম এলেই মাসকাটা নদীর পানি কমে নাব্য সংকট দেখা দেয়। এতে করে মেহেন্দীগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে মাঝ নদী পর্যন্ত এক মাইলের বেশি দূরত্বে লঞ্চ নোঙর করাতে বাধ্য হন মাস্টার। তা না হলে লঞ্চ চরে আটকে যায়। ফলে বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে মেহেন্দীগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ট্রলারে মাঝ নদীতে যেতে হয়। এরপর লঞ্চে উঠে গন্তব্যে যেতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ট্রলার থেকে লঞ্চে ওঠার সময়। এতে করে যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
 
সঞ্জয় আরও বলেন, গত তিন মাস থেকে এ অবস্থা চলছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এক মাস আগে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হলেও কমছে না যাত্রীদের দুর্ভোগ।
 
মেহেন্দীগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ প্রতিদিন নৌযানযোগে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। এজন্য ঢাকাগামী দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ছাড়াও বরিশাল-ঢাকা-মজু চৌধুরীর হাট হয়ে ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। প্রতিদিন ওসব লঞ্চে উঠতে ট্রলার ব্যবহার করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া চাকরির সুবাদে অনেকে বরিশাল থেকে প্রতিদিন লঞ্চযোগে মেহেন্দীগঞ্জ আসছেন। কিন্তু মেহেন্দীগঞ্জ লঞ্চঘাটে লঞ্চ না ভিড়ানোর কারণে লঞ্চে উঠতে ও লঞ্চ থেকে নামতে তাদের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
 
ফেসবুক পোস্টে ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন শিক্ষক এনামুল হক নাসিম একাধিক যাত্রী বলেন, মেহেন্দীগঞ্জের সঙ্গে বরিশালের সড়ক পথ যেটি আছে তা হিজলা-মুলাদী হয়ে তারপর যেতে হয়। ওই সড়কও ভালো নয়। এজন্য মেহেন্দীগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা নৌপথের ওপর নির্ভরশীল। এখন সেই নৌপথও আমাদের জন্য দুর্ভোগের কারণ। শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময় বিষয়টির ওপর সংশ্লিষ্ট দফতর নজর দিলে আমাদের এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
 
বরিশাল-মেহেন্দীগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী সুপারসনিক লঞ্চের মালিক স্বপন খান বলেন, এক মাস আগে ড্রেজিং শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা শেষ করতে পারেনি। মাঝেমধ্যে ড্রেজিং করছে আবার বন্ধ রাখছে। তাছাড়া গত ৭ বছর ধরে ড্রেজিং করার আগে যে কমিটি গঠিত হয় সেখানে লঞ্চ মালিকদের রাখা হচ্ছে না। লঞ্চ মালিকদের রাখা হলে তারা নদীর গতিপথ থেকে শুরু করে যেসব স্থান কাটলে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হবে তার দিক-নির্দেশনা দিতে পারতো।
 
স্বপন আরও বলেন, শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই লঞ্চ মালিকদের ট্রলার ভাড়া করে যাত্রীদের মেহেন্দীগঞ্জের লঞ্চঘাট থেকে আনতে হচ্ছে। আবার একইভাবে লঞ্চ থেকে যাত্রীদের ট্রলারযোগে ঘাটে পাঠাতে হয়। এতে প্রতি ট্রিপে শুধুমাত্র ট্রলার ভাড়া গুনতে হচ্ছে দুই হাজার টাকা। তাছাড়া যাত্রীদের মাঝ নদীতে ট্রলার থেকে তুলতে ও নামাতে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেন এই লঞ্চ মালিক।
 
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নৌ-বন্দরের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। আশা করছি, ড্রেজিং হয়ে গেলে এই সমস্যা থাকবে না। আগামী শীত মৌসুমে যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয় ড্রেজিংয়ের সময় সে বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।