তিন চেয়ারম্যান ও ১৩ মেম্বারের উপস্থিতিতে বাল্যবিয়ে

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার তিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সহায়তায় হাজারও মানুষের সমাগমে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় পৌর কাউন্সিলর ও ১৩ জন মেম্বারও উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) উপজেলার চম্পাপুর ইউপির নোমরহাট বাজারে বাইতুল নূর জামে মসজিদে এই বিয়ে সম্পন্ন করেন মসজিদের ইমাম হাফেজ ক্বারি আবদুর রহিম।

স্থানীয়রা জানায়, খবর পেয়ে কলাপাড়া মহিলা অধিদফতরের হিসাবরক্ষক বাদল চন্দ্র দে বাল্যবিবাহ বন্ধে ঘটনাস্থলে আসেন। তাকে কৌশলে চায়ের দোকানে বসিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।

বিয়েতে উপস্থিত একজন জানান, ধানখালী ইউনিয়েনের মৃত শহীদ মৃধার ছেলে মামুন মৃধার (৩০) সঙ্গে চম্পাপুর ইউপির পাটুয়া আল-আমিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবুল মৃধার মেয়ে মারিয়ার (১৬) বিয়ে হয়। মারিয়া খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুদার, চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার ও পার্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলার হলুদিয়া ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মিন্টু মল্লিক উপস্থিত ছিলেন। কোনও ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই হাজারও মানুষের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, মারিয়া এ বছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ওর বয়স ১৮ বছরের চেয়ে  অনেক কম। তাকে এই বয়সে বিয়ে দিয়ে অন্যায় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মারিয়ার বাবা স্কুলশিক্ষক বাবুল মৃধার কাছে জানতে চাইলে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। 

চম্পাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে আরও দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। মেয়ের বাবা ২০০৩ সালের জন্ম নিবন্ধন কার্ড দেখিয়েছেন। এতে ১৮ বছর না হলেও দুই থেকে তিন মাস বাকি থাকতে পারে। মহিলা অধিদফতরের লোক এসেছিলেন। তিনি জন্মনিবন্ধন কার্ড দেখেছেন।  

আমতলী হলুদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু মল্লিক বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যানরা থাকতেই পারেন। আমি ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলাম। নামাজ শেষে বিয়ে হয়েছে। আমিও মিষ্টিও খেয়েছি। 

কলাপাড়া মহিলা অধিদফতরের হিসাবরক্ষক বাদল চন্দ্র দে বলেন, খবর পেয়ে ওই বিয়ে বন্ধ করতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে তিন জন চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলর ও ১২ থেকে ১৩ জন মেম্বার উপস্থিত ছিলেন। আমি জন্মনিবন্ধন কার্ড দেখতে চেয়েছি। আমাকে যে কার্ড দেখানো হয় তাতে হিসাব অনুযায়ী ১৮ বছর হয়েছে। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়। বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে। 

কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসিম জানান, চেয়ারম্যান সাহেবরা কীভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বাল্যবিয়ে দেন, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহীদুল হক জানান, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।