ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে শিবু লাল দাস (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে ২০ কোটি টাকা দাবি করেছেন অপহরণকারীরা। তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মিরাজও নিখোঁজ রয়েছেন। তবে খোঁজ মিলেছে তার ব্যবহৃত গাড়িটির। প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। মৌখিকভাবে সদর থানায়ও জানানো হয়েছে।

সোমবার (১১ এপ্রিল) রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে যেকোনও সময় গলাচিপা থেকে পটুয়াখালী আসার পথে তাকে অপহরণ করা হয়। ওই ব্যবসায়ী পটুয়াখালীর পৌর শহরের পুরান বাজার আখড়া বাড়ি এলাকার মনোরঞ্জন লাল দাসের ছেলে। ঠিকাদারি, খেয়াঘাটের ইজারা, ব্রিজের টোল আদায়সহ বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারের ব্যবসা রয়েছে তার।

তার ছেলের বউ শান্তা রানী দাস দাবি করেন, ‘সোমবার বেলা ১১টার দিকে শহরের পুরানবাজার আখড়াবাড়ি  নিজ বাসা থেকে তার ব্যবসায়িক কাজে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গলাচিপার উদ্দেশে যান। দিনভর কাজ শেষে রাত ৯টার দিকে গলাচিপা উপজেলার হরিদেবপুর খেয়াঘাট থেকে পুনরায় পটুয়াখালী শহরের নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে গাড়ির চালক মিরাজও ছিল। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্বশুরের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মিরাজকে কল করলে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেলে পরিবারের সবার মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। রাতেই সম্ভাব্য সব স্থানেই খোঁজাখুঁজি করা হয়।’

মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বললে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। তারা (অপহরণকারীরা) বলতে নিষেধ করেছে।’

শিবু দাসের চাচাতো ভাই রানা দাস দাবি করেন, ‘রাত পৌনে ১২টায় শিবুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার স্ত্রী বিউটি রানি দাসের নম্বরে কল করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘‘শিবুকে পেতে হলে ২০ কোটি টাকা লাগবে, পরে ফোন দেয়া হবে।’’ জবাবে তার স্ত্রী বলেছে, ‘‘টাকা দেবো’’। এরপরই কল কেটে দেয়। পরে দুইটা এক মিনিটে পুনরায় কল করে। এ সময় তেমন কথা হয়নি।’

তিনি জানান, গতকাল রাত ৯টার সময় গাড়ি চালক মিরাজ তার সঙ্গে ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিরাজ শিবুর সঙ্গে আছে কি-না তা অনিশ্চিত। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। খোঁজাখুঁজি অব্যাহত আছে।

অপহরণের শিকার ব্যবসায়ীর শ্বশুর শংকর লাল দাস জানান, বিষয়টি রাতেই জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরে মঙ্গলবার সকালে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া এলাকার একটি তেলের পাম্পের পাশে শিবু লাল দাসের ব্যবহৃত গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা। পরিচিত ব্যবসায়ী হওয়ায় সবাই গাড়িটি চিনতে পারায় পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে সেখানে গিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। তখন গাড়ির চালকের এবং মাঝের সিট ভাঙচুর ও এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় একটি খেলনা পিস্তল ও চালক মিরাজের ব্যবহৃত জুতা পাওয়া যায়।

ছেলে কার্তিক লাল দাস বলেন, ‘আমি প্রশাসনের সঙ্গে বাবাকে উদ্ধার অভিযানে আছি। ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো।’

পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাইনুল হাসান বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি। বেশ কিছু ক্লু আমাদের সামনে এসেছে, সেগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। আশা করি, খুব দ্রুত একটা রেজাল্ট পাওয়া যাবে।’

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ীকে পাওয়া যাচ্ছে না এটি সত্যি। আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি। তার ব্যবহৃত গাড়িটি পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের আমড়াগাছিয়া এলাকার একটি তেলের পাম্পে অবস্থায় পাওয়া গেছে।’

ওসি সাংবাদিকদের জানান, মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে মুক্তিপণ দাবির একটি অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। শিবু দাসকে উদ্ধারে পুলিশের ছয়টি টিম কাজ করছে।