পিরোজপুরে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ ইকবালকে শটগান দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে। তার নাম মো. আজগর বিশ্বাস ওরফে তারা বিশ্বাস। তিনি বিশ্বাস প্রোপার্টিজের মালিক। খুলনার রায়ের মহল এলাকায় বাড়ি। তাদের আদি নিবাস পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়। মো. আজগর বিশ্বাস জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও খুলনা জেলার হরিনটানা থানা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি।
মো. আজগর বিশ্বাসের স্ত্রীর বড়ভাই পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কলাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিদারুজ্জমান শিমুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমার ভগ্নিপতি মো. আজগর বিশ্বাসের সঙ্গে আমার ভাই এবং নারী ও শিশুরা গাড়িতে ছিলেন। তাদের সামনে ওইদিন পিরোজপুর পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি আসিফ ইকবাল ও তার সহযোগীরা যে নোংরা ভাষা ব্যবহার করেছেন তা মুখে আনা যায় না।
শটগান দেখিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে হুমকি
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শিমুল আরও বলেন, আমার একমাত্র বোন সোনিয়া মান্নান তন্নীর স্বামী মো. আজগর বিশ্বাস। সোনিয়া মান্নান তন্নী স্লিপ অ্যাপেনিয়া (ঘুমের মধ্যে শ্বাষ প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া) রোগে ভুগছিলেন। গত বছরের ১৩ আগস্ট ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মো. আজগর বিশ্বাস ও সোনিয়া মান্নান তন্নী দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বোন মারা যাওয়ার পর ভগ্নিপতি মো. আজগর বিশ্বাস তার ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ রেখেছেন।
ওইদিনের ঘটনা নিয়ে পরে আজগর বিশ্বাস আত্মীয় চয়ন খানের আইডিতে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
ওই ফেসবুক পোস্টে আজগর বিশ্বাস বলেন, ‘গত ১১ জুলাই শ্বশুরবাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের উদয়কাঠি থেকে ফিরছিলাম। পিরোজপুর পিটিআইয়ের সামনে রাস্তা ব্লক করে আড্ডা দিচ্ছিল কিছু ছেলে। তিনবার হর্ন দেওয়ার পরও তারা সরে না দাঁড়ালে আমি তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে একটি গাড়ি চলে আসার কারণে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে গাড়ি পাশে চাপিয়ে চালিয়ে আসতে বাধ্য হই। তখন ওই আড্ডারত ছেলেদের মধ্যে এক ছেলের কনুইতে আমার গাড়ির লুকিং গ্লাসে লাগে। এরপর আমি গাড়ি স্লো করে বায়ে দাঁড়াই, কিন্তু পেছনে কাউকে না দেখে আবার গাড়ি চালিয়ে চলে আসি। পরে হঠাৎ করে পিরোজপুর জেলা বাসস্ট্যান্ডের একটু সামনে পাঁচ থেকে ছয়টি মোটরসাইকেলে ১০ থেকে ১২ জন এসে আমার গাড়ি ঘিরে ফেলে ও গালাগালি করে। ’
আজগর বিশ্বাস আরও লিখেন, ‘গাড়িতে আমার দুই শিশু সন্তান, আমার একমাত্র ছোট বোন, আমার স্ত্রীর ভাই ও কলাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বদিরুজ্জামান পলাশ এবং তার স্ত্রী, দুই শিশুকন্যা সন্তান ছিল। গাড়ি ঘিরে ফেলায় আমি আতংকিত হয়ে পড়ি। আমি প্রথমে বুঝে উঠতে পারছিলাম না এরা কি ছিনতাইকারী নাকি আমাকে ও পরিবারকে হত্যার উদ্দেশ্যে (কারণ ব্যবসায়িক কারণে আমার শত্রুরা এটা করতে পারে) এতগুলো মোটরসাইকেল নিয়ে আমার গাড়ি ঘিরে ধরেছে। তাই আমার সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের জীবনের রিস্ক নিয়ে গাড়ি থেকে নামি এবং আমার লাইসেন্স করা শটগান হাতে নিয়ে ওই মোটরসাইকেল আরোহীদের জিজ্ঞেস করি কেনো তারা আমার গাড়ির গতিরোধ করেছে। পরে অবশ্য আসিফ ইকবালের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি মিটমাট হয়েছে।’
আসিফ দাবি করেন, ‘তখন আমি ও সঙ্গের ছেলেরা গাড়িটিকে ধাওয়া করি। পরে শহরের বাইপাস সড়কে থাকা নতুন পানির ট্যাংকির কাছে ইমন এন্টারপ্রাইজের সামনে গাড়িটির পথরোধ করি। ওই সময় গাড়ির চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি ব্যাকডালা একটি শটগান বের করে লোড করে আমার বুকে তাক করে খুনের হুমকি দিয়ে পথ বের করে চলে যায়। এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
জানতে চাইলে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আজম মাসুদুজ্জামান বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে।