বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি, ৫ জেলেকে জীবিত উদ্ধার

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় পাঁচ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ছয় জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) ভোরে পটুয়াখালীর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এফবি নিশান নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে ওই ১১ জেলে নিখোঁজ হন।

বুধবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাঁচ জেলেকে জীবিত উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।

স্থানীয় জেলেদের বরাত দিয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‌‘বরগুনার পাথরঘাটা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছ থেকে ভাসমান অবস্থায় তিন জেলেকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় জেলেরা। উদ্ধার জেলেদের বৃহস্পতিবার পাথরঘাটায় নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনের কচিখালী পয়েন্ট থেকে দুই জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে।’

ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত তিন জেলে হলেন- আবছার হোসেন (৪০), মো. সোহেল (২৪) ও মো. জাফর (৩০)। তারা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তবে কচিখালী পয়েন্ট থেকে উদ্ধার দুই জেলের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘জাহাজমারার আমতলী ঘাট থেকে এক সপ্তাহ আগে এফবি নিশান ট্রলার নিয়ে ১৫ জেলে সাগরে মাছ ধরতে যান। নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে ট্রলারটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলারের কাছাকাছি স্থানে মাছ শিকার করছিলেন এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি আবুল কালাম ও দুই জেলে আবছার হোসেন এবং সোহেল। এ সময় আবছার ও সোহেলকে ভাসতে দেখে উদ্ধার করেন মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি। একই এলাকা থেকে জাফরকে উদ্ধার করেন আল্লারদান ট্রলারের জেলেরা।’

এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি আবুল কালাম বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আবছার ও সোহেলকে ভাসতে দেখে আমার ট্রলারের জেলেদের সহযোগিতায় উদ্ধার করি। উদ্ধারের সময় দুজনের অবস্থা মুমূর্ষু ছিল। কিছুক্ষণ পর আবছারের জ্ঞান ফিরলেও সোহেলের জ্ঞান ফিরেছে সন্ধ্যায়। তারা এখন সুস্থ আছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের নিয়ে পাথরঘাটায় পৌঁছাবো আমরা।’ 

আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারডুবি, ১১ জেলে নিখোঁজ

এ সময় আবুল কালামের মোবাইল থেকে উদ্ধারকৃত জেলে আবছারের সঙ্গে কথা বললে তিনি কেঁদে ওঠেন। সেইসঙ্গে বলেন, ‘আমার ভাইটা মনে হয় বাইচ্চা নাই। তার লগে আরও কয়েকজন নিখোঁজ আছে।’  

কীভাবে ঝড়ের কবলে পড়লেন জানতে চাইলে আবছার বলেন, ‘ভোররাতে আমরা জাল টানছিলাম। ট্রলারে ১৫ জন ছিলাম। হঠাৎ সাগরে ঢেউ শুরু হয়। এ সময় একটা দমকা হাওয়া এসে ট্রলারটি উল্টে ফেলে। সবাই সাগরে ডুবে যাই। এরপর কিছুই মনে নেই, কীভাবে এখানে এলাম তাও জানি না।’

পটুয়াখালীর আলিপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দীন মোল্লা বলেন, ‘ট্রলারডুবির দুই-তিন ঘণ্টা পর বঙ্গোপসাগরের কচিখালী পয়েন্ট থেকে দুই জেলেকে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাদের মহিপুরে নিয়ে আসা হবে। এর আগে একই দিন সকালে বাবু নিমাই দাসের মালিকানাধীন নোয়াখালীর একটি বস্ত্র বিক্রির ট্রলার চার জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে মহিপুর নিয়ে আসে। তাদের চিকিৎসা দিয়ে ট্রলার মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।’ 

কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাঁচ জেলেকে উদ্ধারের বিষয়টি শুনেছি। আমরাও অভিযান অব্যাহত রেখেছি। নিখোঁজ ছয় জেলের সন্ধানে অভিযান চলছে।’