এডিশনাল এসপি মহরমের শাস্তি চান এমপি, বরগুনা ছাত্রলীগকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিপেটার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচি থেকে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত ৮টায় বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহর প্রদক্ষিণ করে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই কর্মসূচি বরগুনার ছয়টি উপজেলায় একযোগে পালন করা হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক রইসুল আলম রিপনসহ যুবলীগ, শ্রমিক লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘১৫ আগস্ট শোকের দিনে যেভাবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পেটানো হয়েছে তা মর্মান্তিক। আমি বারবার নিভৃত করার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরমকে আমি থামাতে পারিনি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। সেই সঙ্গে মহরমকে চাকরিচ্যুত করার আহ্বান জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।’

ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যে কমিটি ঘোষণা করেছে তা সম্পূর্ণ নিয়মের বাইরে গিয়ে করা হয়েছে। যার কারণে ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ। এ জন্য বর্তমানে ছাত্রলীগের মধ্যে দুই গ্রুপ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন কাজের কারণেই ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষিত কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। যারা এই অবৈধ কমিটিকে সমর্থন করে তাদেরও জেলা আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করা হবে।’

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষিত এই বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে বরগুনায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। আমাদের দলীয় সব কর্মসূচিতে নতুন নেতৃত্বকে অবাঞ্ছিত করা হলো।’

আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দিন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়মিত কাউন্সিল না করেই বরগুনা ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এরপর ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়। সদ্যঘোষিত ৩৩ সদস্যের কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে গুরুত্বপূর্ণ পদবঞ্চিত প্রার্থীরা বিক্ষোভ করে আসছেন।

প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তার সমর্থক নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে ফেরার পথে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে এলে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ মোল্লা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য রিসাদ হাসান প্রিন্স, তানিম রহমান ও সাইফুল ইসলাম সমর্থিত পক্ষের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এ সময় ইটের আঘাতে পুলিশের ব্যবহৃত একটি গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে যায়। তখন শিল্পকলা একাডেমিতে শোক দিবসের আলোচনা সভা চলছিল। পরে পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত সবাইকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন।

এ সময় সংসদ সদস্য বেরিয়ে আসলে তার কাছে বরগুনা জেলার এডিশনাল এসপি মহরম আলী গাড়ি ভাঙার কারণ জানতে চান। তখন সংসদ সদস্য নিজে দোষীকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও পুলিশ সদস্যরা ভেতরে অবস্থান করা ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন।