অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, সুগন্ধার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কা

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় সুগন্ধা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে দিন-রাত অবাধে বালু উত্তোলন ও ক্রয়-বিক্রয় চলছে। এতে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১৫ দিনে নদীর পাড়ের বসতভিটা ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে বাসিন্দাদের।

নলছিটি উপজেলার খাজুরিয়া থেকে কুমারখালী এলাকা পর্যন্ত নদীর পাড় ঘেষে দিন-রাত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এতে অনুরাগ দড়িচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে। মল্লিকপুর এলাকায় নদী থেকে মাত্র ৪০ ফুট দূরে রয়েছে বরিশাল-নলছিটি সড়ক। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে যেকোনও সময় সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে আবেদন করেও স্থানীয় থানা কিংবা প্রশাসনের সহযোগিতা মেলেনি বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। নাকের ডগায় এমন কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও কোনও এক অজানা কারণে নীরব প্রশাসন। তবে সংবাদকর্মীরা জানতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় প্রশাসন।

সরেজমিন দেখা যায়, সরকারি ইজারাভুক্ত কোনও বালুমহাল না থাকলেও অবৈধভাবে প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ১৫-২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর তা শত শত বলগেট, কার্গো ও ট্রলার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। যে চক্রটি বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে তাদের এ সংক্রান্ত কোনও অনুমতি বা অনুমোদনও নেই। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বালু। পেশিশক্তির বলে সিন্ডিকেটটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে। এ জন্য এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ, তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এর আগে মাঝে মাঝে কিছু অভিযান হলেও অবৈধবাবে বালু তোলা বন্ধ হয়নি।

ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর অভিযোগ, ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী ঘর-বাড়িসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বহু লোকজন ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে নদীর তীরবর্তী অনুরাগ, খাজুরিয়া ও মল্লিকপুর নামে তিনটি গ্রাম।

তারা আরও অভিযোগ করেন, হঠাৎ করে ফসলি জমি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হয়। বালু উত্তোলনের সরকারি নীতিমালা থাকলেও কোনও তোয়াক্কা করেন না ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রটি। ইজারা না নিয়েই চলছে এই হরিলুট। এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এসব ড্রেজার মেশিন বন্ধ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তারা।

অনুরাগ দড়িচর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙলেও এবার ভাঙনের ভয়াবহ তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে ওই চক্রটি। তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও প্রতিকার মেলেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদার জানান, নদী ভাঙন রোধ করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কিছুদিন আগেও বালু উত্তোলনকারীদের জরিমানা করা হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।