নিজ ঘরে গৃহবধূ ও দাদি শাশুড়ির লাশ

এই সিঁধ দিয়ে ঘরে ঢোকা সম্ভব নয়, হত্যায় জড়িত ‘স্বামী-শাশুড়ি’

বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভুতুরদিয়া গ্রামের সেই দুই নারীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে দুই নারীর স্বজনরাই জড়িত। কারণ হিসেবে পুলিশ বলছে, চোরেরা সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে স্প্রে ছিটিয়ে হত্যার যে দাবি নিহতের স্বজনরা করেছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ এই সিঁধ দিয়ে কারও পক্ষে ওই ঘরে ঢোকা সম্ভব নয়। সরেজমিন তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। 

গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ভুতুরদিয়া গ্রামের খন্দকার বাড়ি থেকে ওই দুই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন—ওই বাড়ির গৃহবধূ নাজমুন্নাহার রিপা ও তার দাদি শাশুড়ি লালমুন্নেছা। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে হত্যা মামলা করেছেন রিপার বাবা শাহজাহান খান।

‘জোড়া খুনের ঘটনায় নিহতের স্বজনরাই জড়িত বলে আমরা তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি’ বলে জানালেন বাবুগঞ্জ থানার ওসি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। তবে রিপার স্বামী সোলায়মান সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই ঘটনায় শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিপার শাশুড়ি মিনারা বেগম পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন। চিকিৎসকের অনুমতি পেলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।’

ওসি আরও বলেন, ‘রিপার বাবা শাহজাহান খানের মামলাটি দুটি হত্যাকাণ্ডের এজাহার হিসেবে দায়ের করা হয়েছে। দুই মামলার বাদী শাহজাহান খান। রিপা হত্যার সঙ্গে লালমুন্নেছা হত্যার যোগসূত্র আছে।’

খন্দকার বাড়ির দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন, রিপার সঙ্গে স্বামী সোলায়মান ও শাশুড়ি মিনারার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তবে দাদি শাশুড়ির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল রিপার। বিষয়টি সোলায়মান ও মিনারার সহ্য হতো না। এ কারণে দুজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া সোলায়মানের বোনও রিপাকে সহ্য করতে পারতেন না। সোলায়মান বেশিরভাগ সময় তার বোনের বাসায় থাকতেন। ভাইবোন এবং মায়ের ষড়যন্ত্রে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।’

এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত এবং কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার তদন্ত চলছে বলেও জানান ওসি মাহবুবুর রহমান।

রিপার স্বামী সোলায়মানের দাবি, ঘরের সিঁধ কেটে চোরেরা ঢুকে স্প্রে ছিটিয়ে দেওয়ায় তাদের মৃত্যু হয়।

তবে যে সিঁধ কাটা হয়েছে সেটি দিয়ে কারও পক্ষে ঘরে ঢোকা সম্ভব নয়, হত্যাকাণ্ড আড়াল করতেই ওই সিঁধ কেটে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরাই জড়িত।’

ওই এলাকার গ্রাম পুলিশ আব্দুল হানিফ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই ঘর থেকে চোর চোর চিৎকার শুনে গ্রামবাসী সেখানে গিয়ে দুটি কক্ষে তিন বিছানায় তিন নারীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিন জনকে নেওয়া হয় বাবুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে রিপা ও লালমুন্নেছাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মিনারাকে বরিশাল মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পরে দুই নারীর লাশ উদ্ধার করে বাবুগঞ্জ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।