X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

নীরবে কাঁদেন আবু সাঈদের বাবা-মা, দেখতে চান ছেলে হত্যার বিচার

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০২ জুলাই ২০২৫, ০৮:০১আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:১৭

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় খুশি পরিবার। গত সোমবার তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর শুনে আবু সাঈদের বাবা-মাসহ স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তবে এখনও বাবা মকবুল হোসেন বাড়ির সামনে ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে কাঁদেন। ছেলেকে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মা মনোয়ারা বেগম। ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলেন তিনিও। তবে তাদের সংসার মোটামুটি ভালোভাবেই চলছে। আপাতত কোনও সমস্যা নেই। দুজনে জানালেন, ভালো আছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছেলে হত্যার বিচার দেখতে চান তারা।

গত বছরের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পুলিশ। এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলির সামনে বুক পেতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এই মৃত্যু যেন আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। দেশ ও দেশের বাইরের মানুষ হয়ে উঠে আরও প্রতিবাদমুখর। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। যত দিন গড়ায় পরিস্থিতি ততই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গড়ায় ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বহু মানুষ, আরও গতিশীল হয় আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন। তার বাড়ি পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবরপুর গ্রামে। সহপাঠীরা বলছেন, সাঈদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছেন তারা। এখন বিচারের অপেক্ষায় আছেন। সাঈদের পরিবার ন্যায়বিচার পেলেই স্বস্তি পাবেন তারা।

সেদিন যা দেখেছেন সহযোদ্ধারা

আবু সাঈদের সঙ্গে শুরু থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ। তিনি বলেন, ‘সেদিন পুলিশের উপর্যুপরি ছোড়া ছররা গুলিতে আবু সাঈদ, আমিসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হই। তবে আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে পরে সুস্থ হয়েছি।’

স্মৃতিচারণ করে শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে আমরা হাতেগোনা আট থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন শুরু করি। ছোট আকারে মিছিল করি ক্যাম্পাসে। তখন বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম তাদের অনুসারীদের নিয়ে আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। মিছিল না করার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সাঈদকে ডেকে মারধরও করেছেন পোমেল বড়ুয়া। কিন্তু সাঈদ দমে যাননি। তাকে মারধরের খবর শুনে উল্টো আমাদের দলে দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়তে থাকে। মিছিলও বড় হতে থাকে। ৫ জুলাইয়ের পর থেকে আমাদের মিছিলে শিক্ষার্থী অনেক বেড়ে যায়। ১০ জুলাইয়ের পর থেকে টানা আমরা বড় বড় মিছিল করেছি। এতে নারী শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেছি আমরা। এভাবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রংপুরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শুরু হয় টানা আন্দোলন।’

১৬ জুলাই সকালে নগরের ডিসির মোড় এলাকায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন জানিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বানের পানির মতো ছাত্রছাত্রীরা আসতে থাকেন। দুপুর ১২টার মধ্যে বিশাল মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সামনের সড়কগুলোতে চলাচলের জায়গা ছিল না। এরপর শুরু হয় মিছিল। ২৫-৩০ হাজার শিক্ষার্থীর বিশাল মিছিল সিটি বাজার অতিক্রমের সময় বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সড়কের দুই পাশ থেকে সাধারণ জনতা যোগ দেন। শেষে অর্ধলক্ষাধিক ছাত্র-জনতা পায়ে হেঁটে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নগর থেকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে যান। এ সময় প্রধান ফটক বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভেতর থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল আর পাথর ছুড়তে থাকেন। অপরদিকে ফটকের সামনে ছাত্র-জনতাকে ঘিরে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল আর রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে পুলিশ। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ফটক ভাঙার চেষ্টা করেন। পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের নেতৃত্বে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে পুলিশের সঙ্গে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। গুলি আর রাবার বুলেটে শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হন। এতে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। তখনও সাঈদসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশ তখনও গুলি ছুড়ছিল। দুই দিকে হাত সম্প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিলেন সাঈদ। পুলিশ গুলি চালায় তার দিকে। মাথা-মুখ-বুক-পেটে ছুড়েছে সেই গুলি। ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল পুরো শরীর। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথমে রিকশায় এবং পরে অটোরিকশায় করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। যখন সাঈদকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনও গুলি বন্ধ হয়নি। হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন জানান, অনেক আগেই মারা গেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের বছর পার হতে চলছে। অথচ এখনও বিচার পায়নি তার পরিবার। আমরা অবিলম্বে এই হত্যার বিচার দেখতে চাই।’

বেরোবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী‎ জেবিন বলেন, ‘আবু সাঈদকে গুলি করার সময় আমি কয়েক গজ দূরে ছিলাম। সাঈদ বারবার গুলির সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বলেছিল, বুক পেতে রেখেছি, কর গুলি। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার যে সাহস সাঈদ দেখিয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল। এই মৃত্যু শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছি। পেয়েছি নতুন স্বাধীনতা। তবে এখনও নতুন স্বাধীনতা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ও হত্যার বিচার পেলেই পূর্ণতা আসবে।’

আবু সাঈদকে হাসপাতালে নেওয়া সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা রাজু বাশফোর বলেন, ‘১৬ জুলাই আন্দোলনের দিন আমি একেবারেই সাঈদের কাছাকাছি স্থানে ছিলাম। তাকে যখন টার্গেট করে গুলি করা হলো, তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমরা চার জন সেখানে যাই। তখনও পুলিশ বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ছিল। এর মধ্যেই সাঈদকে প্রথমে রিকশায় এবং পরে একটি অটোরিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওয়ার্ডে পাঠান। রোগীর অবস্থা কী জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বললেন সিনিয়র চিকিৎসক এলে বলবেন। এর মধ্যে সিনিয়র এক চিকিৎসক এসে বলেন, অনেক আগেই মারা গেছে। আসলে তার সারা শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। পরে তার মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। তাতেও বাধা দিয়েছিল পুলিশ। এখনও সব অপরাধী ধরা পড়েনি। তাদের ধরতে হবে।’

মরদেহ নিয়ে মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলা সদস্যসচিব আহসানুল আরেফিন তিতু বলেন, ‘মরদেহ নিয়ে আমরা মিছিল বের করলেও পুলিশ পরে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হতে চললেও এখনও বিচারকাজ শুরু হয়নি। এটি আমাদের জন্য হতাশার।’

বিচারকাজ আরও গতিশীল করতে হবে

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘সেদিন আমরা কয়েকজন সহকর্মী হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি সাঈদ মারা গেছে। শিক্ষার্থীদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল সেখানকার পরিবেশ। শিক্ষার্থীরা মরদেহ স্ট্রেচারে নিয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হয়। হাসপাতালের তিনতলায় সার্জারি ওয়ার্ডে ঢুকে দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী, যাদের অর্ধেক ছররা গুলিতে আহত। এসবের বিচার হবে কিনা জানি না। তবে সন্তানহারা সাঈদের মা-বাবা বিচার চায়, বিচার না হলে ওই পরিবার আমাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাসও না। কাজেই বিচারকাজ আরও গতিশীল করতে হবে।’

যা আছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে

সাঈদের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাঈদের মুখ থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির চিহ্ন। গুলি ঢুকে শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি করেছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। তবে মাথার বাঁ দিকেও আঘাতের কারণে রক্তজমাট ছিল। মৃত্যুর দুই মাস আট দিন পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ছররা গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। ১০ মিটারের মধ্যে গুলি করায় তার শরীরের ভেতরের কিছু অঙ্গ ফুটা হয়েছিল। যার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। মাথায় আঘাতের বিষয়ে রাজিবুল ইসলাম জানান, তার মাথার বাঁ দিকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সেটি তিনি পড়ে গিয়ে বা পারিপাার্শ্বিক অন্য কারণে হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর কারণ নয়। তাকে গুলি করা না হলে মৃত্যু হতো না। খাদ্যনালি ও ঊরুর রক্তনালি জখমের কারণে রক্তজমাট বাঁধে। এই রক্তক্ষরণের কারণে শকে চলে যান ও মৃত্যু ঘটে।

বিচার দেখতে চান বাবা-মা

মঙ্গলবার সাঈদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘরটি আধা পাকা হলেও নতুন রঙ করা হয়েছে। বাবা মকবুল হোসেন কৃষিজমিতে কাজ করতে বাড়ি থেকে আধা মাইল দূরে গেছেন। সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এখন মোটামুটি ছেলেরা আয় রোজগার করছে। সংসার ভালোভাবে চলছে। কোনও সমস্যা নেই। সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছি। সেগুলো দিয়ে চলছি।’

তিনি বলেন, ‘শুনেছি আবু সাঈদ হত্যা মামলার ৩০ আসামির মধ্যে পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। প্রায় এক বছর হলো আমার আদরের ছোট ছেলেকে আমার কবরের জায়গায় কবর দিয়েছি। এই এক বছরে তার কবর জিয়ারতে যত মানুষ এসেছে, তাতে আমার মন ভরেনি। তবে এতটুকু সান্ত্বনা, দেশের মানুষ জালিম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। সেইসঙ্গে সাঈদ হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় আমি বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি, এই সরকার আমার সন্তান হত্যার বিচার করবে। আমরা ন্যায় বিচার চাই। অন্তত মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।’

সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। এক বছর হতে চললো, এখনও অনেক খুনি চাকরি করছে। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। ছেলেকে হত্যার পর লাশ দাফনেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। তড়িঘড়ি দাফনের জন্য বলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। তাদের কোনও শাস্তি হলো না। তাদের গ্রেফতারও করা হলো না আজও। যারা ছেলেকে হত্যা করেছে, তাদের সবার ফাঁসি দেখে যেতে চাই। যাতে আর কোনও মায়ের বুক খালি না হয়।’

আবু সাঈদ ফাউন্ডেশন

সাঈদ হত্যা মামলার বাদী তার বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘আমি ২৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলাটি করেছিলাম। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি উচ্চপদস্থ কমিটি নিয়ে পীরগঞ্জে এসে তদন্তের পর আরও পাঁচ জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে ৩০ জন আসামি হয়। সোমবার সব পলাতক আসামির বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে আশা করেছিলাম, আরও ছয় মাস আগে মামলার এ সিদ্ধান্ত আসবে। আমি চাই যারা আমার ছোট ভাই হত্যায় জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যারা নিরপরাধ তারা যেন মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাইয়ের নামে একটি আবু সাঈদ ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে গরিব অসহায় মানুষদের সহায়তা দেওয়া হয়।’

২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

সাঈদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। মামলার ৩০ আসামির মধ্যে পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ গত সোমবার এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এদিন ট্রাইব্যুনাল-২-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে ৩০ জনকে আসামি করা হয়।

৩০ আসামির মধ্যে চার জন গ্রেফতার আছেন। তারা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ। তাদের পরবর্তী শুনানির তারিখে ট্রাইব্যুনাল-২-এ হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ জুলাই।

/এএম/
সম্পর্কিত
দিনের ভোট রাতে হওয়ার কথা স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা
গণ-অভ্যুত্থানে নিহত রিয়ার মৃত্যুর ১১ মাস পর মামলা
আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানো: ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল
সর্বশেষ খবর
কলার চেয়েও বেশি পটাশিয়াম মেলে এই ৪ খাবারে
কলার চেয়েও বেশি পটাশিয়াম মেলে এই ৪ খাবারে
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা রয়ে গেছে: নাহিদ ইসলাম
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা রয়ে গেছে: নাহিদ ইসলাম
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে সাংবিধানিক কমিটি হবে: ডা. তাহের
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে সাংবিধানিক কমিটি হবে: ডা. তাহের
দিনের ভোট রাতে হওয়ার কথা স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা
দিনের ভোট রাতে হওয়ার কথা স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা
সর্বাধিক পঠিত
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
ক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!
ঢাকা সিটি কলেজক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি