প্রাইভেটকারে ধাক্কা লাগায় রিকশাচালককে কিডনি বিক্রি করতে বললেন চিকিৎসক

দ্রুতগতিতে এসে প্রাইভেটকারের পেছনে ধাক্কা দেওয়ায় ৭০ বছর বয়সী এক রিকশাচালককে চার ঘণ্টা পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়। ধাক্কা লাগায় প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করে রিকশাচালককে কিডনি বিক্রি করে কিংবা তার ছেলেমেয়েকে বন্ধক রেখে ক্ষতিপূরণ দিতে বললেন গাড়ির মালিক চিকিৎসক মহসিন হাওলাদার। তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

রিকশাচালক হচ্ছেন বরিশাল নগরীর রসুলপুর বস্তির বাসিন্দা মো. জামাল হোসেন। অসুস্থ স্ত্রী ও মেয়ের চিকিৎসা খরচ জোগাতে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমবার অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে রাস্তায় নামেন জামাল। এদিক বিকাল ৩টার দিকে নগরীর ব্যস্ততম বটতলা মোড় এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন।

জামাল বলেন, সারাদিন কিছুই খাইনি। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী-মেয়ে রেখে এসেছি। কোনও উপায় না পেয়ে চিকিৎসা খরচ জোগাতে আজ প্রথম গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। বিকালে বটতলা মোড় এলাকায় রিকশার গতি বেড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। এরপর প্রাইভেটকারে ধাক্কা লেগে যায়। আমি রিকশার নিচে চাপা পড়ি। সেখান থেকে ধরে এনে আমাকে বটতলা ফাঁড়ির পুলিশে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে গাড়ির মালিক এসে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তাকে অনেক অনুনয় বিনয় করে বলেছি, আমার কাছে টাকা নেই। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে আমার কিডনি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ চাইলেন। তা না পারলে আমার ছেলেমেয়েকে তার বাসায় কাজে দিয়ে ক্ষতিপূরণ শোধ করতে বললেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যা ৬টার দিকে জামালের ছেলে খেয়া নৌকাচালক সাগর হোসেন পুলিশ ফাঁড়িতে এসে চিকিৎসক মহসিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তার বাবাকে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু তাতেও মহসিনের মন গলেনি। ক্ষতিপূরণ দিতে না পারলে তার বাসায় কাজ করে টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন। এ সময় সাগর ডা. মহসিনের পা ধরলেও সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

প্রাইভেটকারের চালক মো. সোহেল বলেন, রিকশাচালক দ্রুতগতিতে চালিয়ে আসায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য একটি রিকশার ওপর তুলে দেয়। এরপর রিকশাটি গাড়ির পেছনের অংশে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি প্রাইভেটকারের মালিককে জানাই। তিনি এসে রিকশাচালকের কাছে ক্ষতিপূরণ চান। পরবর্তীতে রিকশা ও রিকশাচালক ও প্রাইভেটকারসহ আমাদের ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ।

বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নুরুজ্জামান বলেন, ট্রাফিক পুলিশের ডাকে আমরা ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে জটলার মধ্যে দেখতে পাই, রিকশাটি প্রাইভেটকারের পেছনের অংশে ধাক্কা লাগায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন প্রাইভেটকারের মালিক ডা. মহসিন। তিনি এসে রিকশাচালকের ওপর ক্ষুব্ধ হন। সেখানে উপস্থিত মানুষজন রিকশাচালককে মাফ করে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও কারও কথা রাখেননি তিনি। বাধ্য হয়ে রিকশাচালককে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবে চার ঘণ্টা ফাঁড়িতে রেখেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাদের সবার অনুরোধে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রিকশাচালককে মাফ করে দেন চিকিৎসক। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মহসিন হাওলাদার বলেন, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতিপূরণ চেয়েছি। বারবার দেওয়ার সামর্থ্য নেই বলায় ওসব কথা বলেছি। তখন মেজাজ খারাপ ছিল। পরে মাফ করে দিয়েছি।