কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে লাউ

বরিশাল নগরীর সিকদারপাড়া প্রথম লেনে সড়কে ‘লাগবে তরকারি’ ‘লাগবে তরকারি’ বলে হাঁক তুলছেন সবজি বিক্রেতা। এ সময় ওই এলাকার গৃহবধূরা জানালা-বারান্দা অনেকে আবার সরাসরি ভ্যানের কাছে গিয়ে লাউয়ের দরদাম করছিলেন। ভ্যানে লাউ কাটা দেখে তারা প্রশ্ন করেন, ‘এভাবে বিক্রি করছেন কেন?’ বিক্রেতার সোজাসাপ্টা জবাব, ‘কেজি দরে বিক্রি করি লাউ। ৩০ টাকায় কিনতে পারবেন। যেটুকু নেবেন সেটুকুর মূল্য দেবেন।’

বিক্রেতার এ কথা শুনে দরদাম করতে আসা গৃহবধূরা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বলছিলেন, ‘এখন লাউও কেজি দরে কিনে খেতে হবে?’ এ সময় এক গৃহবধূ কেজি দরে লাউ কিনলেন। দেড় কেজি লাউয়ের দাম হয়েছে ৪৫ টাকা।

ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করছেন আকবর আলী। তিনি জানান, গত ৪-৫ দিন ধরে কেজি দরে লাউ বিক্রি করছেন। তাতে তার বিক্রি বেড়েছে। এ থেকে তার লাভও বেশি হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। তবে কেউ বেশি নিলে দামটা কমিয়ে নেন তিনি। বরিশালের পাইকারি বাজার থেকে পিস হিসেবে লাউ ক্রয় করেন এই বিক্রেতা। তার মতো অন্য বিক্রেতারাও একইভাবে লাউ বিক্রি করেন। এতে তার কোনও অপরাধ নেই বলে দাবি করেন তিনি। মাপে ঠিকমতোই দেন বলেও জানান।

লাউ কেজি হিসেবে বিক্রির খবর পেয়ে অনেকে আসেন বিক্রেতাকে দেখতে। এ সময় ভ্যানে থাকা দুই পিস করা একটি লাউ কেজি হিসেবে ক্রয় করেন ক্রেতারা।

ক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘একদিক থেকে ভালো হচ্ছে, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু ক্রয় করা সম্ভব। কিন্তু দামের দিক থেকে ঠকছেন ক্রেতারা। যে লাউ ৪০-৫০ টাকা পিস হিসেবে ক্রয় করা যায়। কেজি দরে সেই লাউ অর্ধেক কিনতে হচ্ছে একই টাকায়।

একইভাবে কেজি দরে লাউ বিক্রি করতে দেখা গেছে নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায়। বিক্রেতা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তবে তিনি কেটে বিক্রি করতে রাজি হননি। অপরদিকে নথুল্লাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় কলাই শাকও কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। কেজি ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ কলাই শাক মাদারীপুর থেকে আসছে বস্তায় ভরে। সেখানে বস্তা হিসেবে পাইকারি ক্রয় করছেন খুচরা বিক্রেতারা। কিন্তু বিক্রির সময় বিক্রি করছেন কেজি দরে। আগে কলাই শাক ভাগ দিয়ে বিক্রি হতো।

কলাই শাকও বিক্রি হচ্ছে কেজিতে

বাংলা বাজারের টিপু খান নামে এক ক্রেতা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘অপেক্ষায় থাকেন ডিমও কেজি হিসেবে কিনতে হবে।’

এ ব্যাপারে বরিশাল সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখন অনৈতিকভাবে ধনাঢ্য হওয়ার এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। সেই প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ব্যবসায়ীরা মজুত করে অতিরিক্ত লাভে আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য বিক্রি করে আসছে। কিন্তু যে উৎপাদন করছে সেই কৃষক কিছুই পাচ্ছে না। লাউ কেন, আগে কমলা ও আপেল হালি/ডজন হিসেবে বিক্রি হতো। এখন তা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগেও কুমড়া পিস হিসেবে বিক্রি হতো। তাও বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। তরমুজ পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। লাউ কেজি দরে বিক্রি করার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এজন্য কৃষকবাজার থাকা প্রয়োজন। যেখানে কৃষক তার ক্ষেতের ফসল বিক্রি করবে। ক্রেতা সরাসরি সেখান থেকে তা ক্রয় করবে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়লেও ক্রেতা খুশিমনে কৃষককে দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এখন মধ্যস্বত্বভোগীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের চুষে নিচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের কোনও পথ আছে কিনা তা জানা নেই।’

বরিশাল সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক রাসেল খান বলেন, ‘লাউ কেটে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে প্রথম শুনলাম। লাউ সাধারণত পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। কেজি দরে বিক্রির নির্দেশনা কারা দেয়, তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বরিশাল বিভাগীয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’