গৃহপরিচারিকার কাজ করেন মা, অভাব ঘোচাতে ঢাকায় এসে লাশ হলেন ছেলে

বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের দিনমজুর মো. নান্টু হাওলাদারের ছেলে নাইম হোসেন। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানী শহর ঢাকায়। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়েছিলেন বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্ট।  সেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন তিনিও। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন অধরা রেখে লাশ হয়ে ফিরলেন গ্রামের বাড়িতে।

শুক্রবার (১ মার্চ) বিকাল সোয়া ৫টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের মর্গ থেকে লাশ এসে পৌঁছায় গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের বড় গৌরিচন্না গ্রামে। এ সময় স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ।

যে সন্তান পরিবারের দুঃখ লাঘবের জন্য পাড়ি জমিয়েছিল ঢাকা সেই সন্তানের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তার প্রিয় বাবা। লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাড়ি পরিণত হয় শোকপুরীতে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা নান্টু হাওলাদার। ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা লাকি বেগম।

স্বজনরা জানায়, নাঈম ২০২১ সালে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না নওয়াব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে বরগুনা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অসচ্ছল পরিবারের অভাব ঘোচাতে ও নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে এক মাস আগে ঢাকায় পাড়ি জমায় নাইম। প্রথমে একটি রেস্টুরেন্টে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নেন। এরপর কর্মস্থল পরিবর্তন করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে যোগদান করেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে দায়িত্ব পালনের সময় রেস্টুরেন্টটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। পরে রাত দশটার দিকে আগুনের ঘটনা এবং তার অবস্থান সম্পর্কে বাড়িতে ফোন করে তার বাবাকে জানান নাইম। এর কিছুক্ষণ পরই তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পরে শুক্রবার সকালে তার মারা যাওয়ার খবর পান স্বজনেরা। লাশ বাড়িতে নিয়ে আসার পর সন্ধ্যা ৭টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

নিহতের চাচা মো. মিরাজ দফাদার বলেন, ‘নাইম অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ওর মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তার বাবা শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যখন যে কাজ পায় সে কাজ করে। সংসারের এমন দুর্দশায় হাল ধরতে নাইম ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নেয়। কিন্তু এরপর এখন তাকে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। চোখের সামনে একটি পরিবার একেবারে পথে বসে গেলো।’

নিহত নাইমের ফুফু মাহফুজা বলেন, ‘অভাবের কারণে নাইমের মা লাকি বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এটা নাইম ভালোভাবে নিতে পারেনি। তাই অন্যের বাড়িতে মায়ের কাজ করা বন্ধ করতে ঢাকায় যায়। তরতাজা ছেলেটা এখন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। নাইমের ওপর ভরসা করে অনেক টাকা ঋণ করে সম্প্রতি নতুন ঘর তুলেছেন তার বাবা। ঋণের জালে জর্জরিত এই পরিবারটি একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একমাত্র ছেলেও এখন না ফেরার দেশে।’