চোর সন্দেহে যুবককে গাছে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা

ঝালকাঠিতে চোর সন্দেহে এক যুবককে গাছে বেঁধে পিটুনি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার (১৯ মে) গভীর রাতে জেলার নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঢাপর গ্রামে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম রিয়াজ ফকির (২৪)। তিনি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী গ্রামের নুরু ফকিরের ছেলে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রবিবার রাত ২টার দিকে নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঢাপর এলাকায় মৃত এলেম গাজীর গোয়ালঘরের বেড়ার টিন খোলার শব্দ পেয়ে পরিবারের লোকজন ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন এসে ওই যুবককে আটক করে গাছে বেঁধে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ খবর পেয়ে সোমবার (২০ মে) সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। 

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. টি এম মেহেদী হাসান সানি বলেন, ‘ওই যুবককে মৃত অবস্থায় ঝালকাঠি হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহত যুবকের সুরতহাল রিপোর্টে দেখা গেছে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরিবারের লোকজনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ আলী স্থানীয় গ্রাম পুলিশের বরাত দিয়ে জানান, গোয়ালঘরের টিন খোলার শব্দ পেয়ে ঘরের লোকজন বাইরে এসে ওই যুবককে ধাওয়া দেয়। এরপর এলাকাবাসী তাকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে। তিনি আরও জানান, হত্যার ব্যাপারে থানায় লিখিত কোনও অভিযোগ আসেনি। এখনও এ ঘটনায় মামলা হয়নি।

ঢাপর গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রামে প্রায়ই চুরি হয়। তাই গভীর রাতে ওই বাড়ির কাছে সড়কে যুবককে সন্দেহজনক চলাফেরা করতে দেখায় এলাকাবাসী তাকে ধরে পিটুনি দেয়।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গোয়ালঘরের টিন খোলার সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকারে স্থানীয়রা ওই যুবক ধরে ফেলে। পরে তাকে পিটুনি দেওয়া হয়।’

ওই বসতঘরের বাসিন্দা নাসিমা বেগম বলেন, ‘গভীর রাতে আমি গোয়ালঘরে শব্দ শুনতে পাই। বের ওই যুবককে হয়ে সেখানে দেখি। এ সময় ডাক-চিৎকার করলে এলাকার লোকজন এসে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।’

মরদেহ নিতে আসা নিহত ওই যুবকের বাবা নুরু ফকির বলেন, ‘আমার ছেলে চোর নয়, সে জেলে। মাছ ধরে বিক্রি করে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।’