‘আমি এক শহীদের বাবা, ছেলে সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছে’

কান্নার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়নের মানিককাঠি গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরও কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি বিষয়টি সত্য। মনে মনে বারবার বলেছেন সংবাদটি যেন মিথ্যা হয়। কিন্তু পরক্ষণেই সবকিছু ওলটপালট করে দেয় তাকে। তার ছেলে ছাত্রলীগের হামলায় মারা গেছে, এটি গুজব ছিল না। বিষয়টি সত্য, এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহাজে চাকরিরত জাকির।

পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করা জাকির জরুরি কাজে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। ঘটনার পরপরই স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশী পরিচিতজন সকলেই মোবাইল করে খবর জানতে চান। কী খবর দেবো। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ এটা যে কতটা কষ্টের তা কাউকে বোঝানো যাবে না। কোনোদিন তার ছেলে আর ফিরে আসবে না, বিষয়টি মনে করতেই তার বুক ফেটে যায়। কথাগুলো বলছিলেন ছেলেহারা বাবা জাকির হোসেন।

বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে ছেলের লাশ বাড়িতে আসার পর শান্তর বাবা-মা ও একমাত্র বোন জান্নাত অঝোরে কেঁদেছেন। তাদের কান্নায় অশ্রু ঝরেনি এমন কোনও ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। গ্রামবাসী আসেন শান্তর মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য।

ফয়সাল আহমেদ শান্ত চট্টগ্রামের বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) সম্পন্ন করেন। এরপর চট্টগ্রামের এমইসি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন শান্ত। নামের সঙ্গে তার আচার-আচরণের প্রচুর মিল ছিল। একেবারে শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল শান্ত।

গ্রামবাসী জানান, মাঝেমধ্যে গ্রামে আসলে তার দেখা মিলতো। তবে তার মধ্যে কোনও ধরনের খারাপ কিছু কখনোই লক্ষ্য করেননি তারা। নামের সঙ্গে হুবহু মিল ছিল শান্তর আচরণের।

স্বজনদের আহাজারি (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

বুধবার জোহরের নামাজ শেষে মানিককাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শান্তর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে শান্তর বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে কারও সঙ্গে কোনও ধরনের ছোট-বড় অপরাধ করে থাকলে মাফ করে দেবেন। আমি একজন শহিদের বাবা। আমার ছেলে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করেছে। সেখানে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’ তিনি হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন।

এরপর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তর পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশী ছাড়াও লাশের সঙ্গে যাওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলনের একাধিক নেতাও উপস্থিত ছিলেন জানাজাতে। জানাজা শেষে শান্তর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় একই গ্রামের তার নানাবাড়ি হাওলাদার বাড়িতে। সেখানে পারিবারিক গোরস্থানে শান্তর দাফন সম্পন্ন হয়।

বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শান্ত তার বাবা-মায়ের সঙ্গে চট্টগ্রামে বসবাস করতো। মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতো। খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল সে।’

প্রসঙ্গত, ষোলশহর রেলস্টেশনে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির স্থানে আগেই লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিলসহকারে ষোলশহরের দিকে আসতে থাকলে একপর্যায়ে মুরাদপুরে হামলে পড়ে তারা। হামলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই হামলায় শান্তসহ তিন জন নিহত হন।